টিউমার হলো শরীরের কোনো কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার বা টিউমার হতে পারে। টিউমার দুই প্রকার। একটি হলো বেনাইন এবং অন্যটি মেলিগন্যান্ট।
বেনাইন টিউমার অত বেশি ক্ষতিকর নয়। এটি চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়। ক্যান্সার বলতে আমরা যা বুঝি, তা হলো মেলিগন্যান্ট টিউমার। আশার কথা, মস্তিষ্কে বেনাইন টিউমার বেশি হয়।
কিন্তু সমস্যা হলো মস্তিষ্কে যেহেতু জায়গা কম, তাই টিউমার প্রভাব ফেলতে পারে সহজেই। মানে হলো, লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাড়াতাড়ি। এর ফলে রোগী দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যায়। তাই রোগ ধরা পড়ে তাড়াতাড়ি। মস্তিষ্কে মেটাস্টাসিস হতে পারে, তবে তা খুব কম।
কারণ
মস্তিষ্কের টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে। শিশুদের যত ক্যান্সার হয় তার দ্বিতীয় কারণ এটি। কিন্তু এর কারণ জানা যায় না। তবে কিছু জিনের মিউটেশনে এটি হতে পারে। এ ছাড়া রেডিয়েশনেও হতে পারে টিউমার।
লক্ষণ
মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা। তবে মাথা ব্যথা হলেই যে মস্তিষ্কের টিউমার বা ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। মাথা ব্যথার যত কারণ আছে তার বেশির ভাগই কিন্তু অন্য। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথা ব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। মাথা ব্যথা সারাক্ষণ থাকে, পুরো মাথায় হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা থাকে। হাঁচি-কাশি দিলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বেশি হয়। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে। টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—মস্তিষ্কের সামনের দিকে টিউমার হলে আচরণে অস্বাভাবিকতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, মনোযোগে ঘাটতি হতে পারে। শরীরের এক পাশ ধীরে ধীরে অবশ হওয়া, চোখে দেখার সমস্যা, হাঁটতে সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা, কথা বলার সমস্যা, খিঁচুনি, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
টিউমার নির্ণয়ে শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জরুরি মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই। এ ছাড়া আরো কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
চিকিৎসা
টিউমার হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। লক্ষণ দেখে দ্রুত চিকিৎসা নিলে এই রোগ ভালো হয়। মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে আছে মেডিক্যাল চিকিৎসা, সার্জারি, রেডিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি। ব্রেন টিউমারের মূল চিকিৎসাপদ্ধতি সার্জারি। কিছু টিউমার আছে, যার পরিমাণ বেশ কম, তা শুধু ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে যায়। আর চিকিৎসক যদি অপারেশন করাতে বলেন, তাহলে অহেতুক দেরি না করে অপারেশন করানোই ভালো।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
সহকারী অধ্যাপক
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা।