জাফলং ভ্রমনের এখনই সময়

প্রকাশকালঃ ২২ জুলাই ২০২৩ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ ২৫৪ বার পঠিত
জাফলং ভ্রমনের এখনই সময়

রা বর্ষায় টইটম্বুর জাফলং যাওয়ার জন্য বাইশে শ্রাবণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কি দরকার। সুযোগ বুঝে একটা ব্রেক নিন।

গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনীশক্তি বাড়ানোর জন্য পাহাড় আর বনে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। দূষণে ভরা নগরজীবনের ক্ষেত্রে তাই পথ আর কোথায়? ঠিক আছে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য পাহাড়ে যাবেন। কিন্তু সেখানের একঘেয়েমি থেকে একটু সারল্যমাখা সৌন্দর্য কি আকাঙ্ক্ষিত নয়? হ্যাঁ, তা তো বটেই। সেজন্যই তো জাফলং এর কথা বলছি। এখানে বারবার গেলেও বিরক্তি আসবে না।

সিলেটের বাস পাওয়া সমস্যা নয়। গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, মিরপুর এমনকি উত্তরা থেকেও সিলেটের বাস পাবেন। আর যদি মনে হয় সত্যজিৎ বা কলকাতার সাহিত্যের স্টাইলে ভ্রমণ করবেন তাহলে ট্রেনের বগিই ভরসা।

জাফলং সিলেটের গোয়াইনঘাটে, মেঘালয় ও বাংলাদেশ সীমান্তে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। শহর থেকে এর দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। বর্ষার শুরুতে বা শেষে গেলেই এর আসল সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায়। সিলেট শহর থেকে জাফলং যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। পাবলিক বাস, রিজার্ভ গাড়ি বা লেগুনায় করে যাওয়া যায় জাফলংয়ে। যাওয়ার পথটাই তো মজার। যাওয়ার পথে আপনি দেখা পাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তার মধ্যে একটির। অন্তত সেখানে যারা গিয়েছেন একবার তারা এ কথা সবসময় বলেন। এই রাস্তা ধরে জৈন্তাপুর থেকে জাফলং যেতে সব ঝরনা ভারতের দিকে। তাই এপারে দাঁড়িয়ে হতাশ পথিকের মতো শুধু তাকিয়ে থাকতে হয়। সে আক্ষেপ থাকলো। কিছু তো করার নেই। তারপরও শান্তি আছে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের মধ্যে এই পথে যেতে যেতে আপনি দেখা পাবেন সারি সারি চা-বাগান, হজরত (রা.) শাহ পরানের মাজার, সবুজ পাহাড়, লালা খাল, জাফলং-ডাউকি ল্যান্ড বর্ডার আর বিশাল হাওর। এগুলোও তো কম নয়।


জাফলং পৌঁছে একটু উঁচু টিলায় দাঁড়িয়ে ওপারে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সাজানো ভারতের ডাউকি শহর দেখতে পাওয়া যাবে। ডাউকি পাহাড় থেকে ছুটে আসা পাহাড়ের পানি এপারে এসে হয়েছে খরস্রোতা নদ ‘পিয়াইন’ আর ‘ধলাই’। নদের এপাড়ের ঘাটে নৌকা ভাড়া করে চলে যেতে হবে ওপাড়ে, যেখানে আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা। সেখান থেকে দেখা যায় নয়নাভিরাম ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম প্রবহমান ডাউকি জলপ্রপাত আর ঝুলন্ত ব্রিজ। বর্ষায় পিয়াইন নদে নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন আপনার মানসপটে ভাসবে। 

পিয়াইনের পাশে স্তূপে স্তূপে পাথর সাজানো। স্বচ্ছ পানি দেখলে একেবারে মন জুড়িয়ে যায়। আবার হুট করে নামা বৃষ্টি অন্য জগতে নিয়ে যায়—হিমশীতল পানি দেয় অন্য রকম আবেশ। এখানে নৌকাভ্রমণ সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। এটা একটা অনন্য অভিজ্ঞতা।

জাফলংয়ের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ এখানকার পাথর। হ্যাঁ অবাক হওয়ার কিছু নেই। সারাবিশ্বেই অনেক সুন্দর জায়গার প্রাণ পাথর। এখানেও তাই। সহস্র বছর ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া পাহাড়ের নুড়ি থেকেই এই পাথরের স্তূপের সৃষ্টি। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বিশাল সব চা-বাগান। আশপাশেই আছে চুনাপাথরের খনি। স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতির মেলবন্ধনে দারুণ আবহ সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে এখানকার স্থানীয় বাজার ঘুরলেই পাবেন আদিবাসীদের হস্তশিল্প আর গয়না। ফিরতি পথে স্মৃতিস্বরূপ নিয়ে আসতে পারেন এসব। স্বচ্ছ পানি আর সবুজের আবহে জাফলং ভ্রমণ আপনার স্মৃতির পাতায় নিশ্চয়ই দারুণ অভিজ্ঞতা জুড়ে দেবে। আর যেমনটা বলেছি, সারল্যমাখা এই প্রকৃতির কোলে আপনি কদিন মানসিক প্রশান্তিতে থাকবেন। আবার যখন ফিরবেন দখল-দূষণের নগরীতে তখন মানসিক প্রশান্তিই আপনাকে দেবে শান্তি।