প্রাচীন যুগ থেকে টাখনুর নিচে কাপড় সাধারণত অহংকারবশত পরা হয়। রাসুল (সা.)-এর যুগেও এর প্রচলন ছিল। যেহেতু মহান আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না, তাই নবীজি (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। এ শুনে আবু বকর (রা.) বলেন, আমার অজ্ঞাতে কাপড়ের একপাশ কোনো কোনো সময় নিচে নেমে যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি তো অহংকারের সঙ্গে তা করছ না। মুসা (রহ.) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আবদুল্লাহ (রা.) কি ‘যে ব্যক্তি তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহ.) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৫)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আল-‘আলা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.)-কে লুঙ্গি পরিধানের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি এ বিষয়ে সম্যক অবগত লোকের কাছেই এসেছ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিমের পরিধেয় লুঙ্গি-পায়জামা নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত থাকবে, তবে টাখনুদ্বয় পর্যন্ত রাখলেও কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নিচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশে নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৩)
এর মানে এই নয় যে টাখনু কখনো ঢাকা যাবে না। যেমন মোজা ইত্যাদি পরলেও টাখনু ঢেকে যায়; কিন্তু তার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নবীজি (সা.) নিজেও মোজা পরিধান করেছেন, শীতের দিনে তার ওপর মাসাহও করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, সাহল আস সাঈদি থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) চামড়ার মোজাদ্বয়ের ওপর মাসহ করেছেন এবং আমাদেরও মোজাদ্বয়ের ওপর মাসহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৪৭)
তবে ইহরাম অবস্থার কথা ভিন্ন। সালিম (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, মুহরিম (ইহরাম অবস্থায় থাকা) ব্যক্তি কি ধরনের কাপড় পরিহার করবে? তিনি বলেন, মুহরিম ব্যক্তি জামা, টুপি, পায়জামা, পাগড়ি, জাফরান অথবা ওয়ারাস মাখা কোনো কাপড় ও মোজা পরবে না। তবে যার জুতা নেই সে মোজা পরতে পারবে। কিন্তু মোজা দুটি সে এমনভাবে কেটে নেবে যাতে তা গোছাদ্বয়ের নিচে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৮২৩)