আলমগীর, মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি:-
জামালপুরের মাদারগঞ্জে রহস্যজনক মাসুদ প্রামাণিক (২৩) হত্যা মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডটি মাদক ব্যবসা ও সেবনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ১২ জুলাই রাত ২টার দিকে মাদারগঞ্জের কোয়ালিকান্দি এলাকায় নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হন মাসুদ প্রামাণিক, যিনি স্থানীয় সম্রাট আলীর ছেলে। একই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হন তার প্রতিবেশী চাচা রুবেল প্রামাণিক। তাকে প্রথমে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদারগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ জানান, মাসুদ ও রুবেলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মাদক সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই রুবেল পরিকল্পিতভাবে মাসুদকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেয়। এর আগে রুবেল একটি ধারালো ছুরি সংগ্রহ করে নিজ হেফাজতে রাখে।
ওসি জানান, সেদিন রাত আনুমানিক ২টার দিকে মাদক সেবনের পর মাসুদ ঘুমিয়ে পড়লে রুবেল পেছন থেকে ছুরি দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। মাসুদ জেগে উঠে ছুরিটি রুবেলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রুবেল আহত হয়—তার হাত ও গলায় কাট লাগে। এরপরও রুবেল মাসুদকে শ্বাসরোধে হত্যা নিশ্চিত করে। ঘটনাস্থলেই মাসুদের মৃত্যু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে রুবেলও মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
রুবেলকে আহত অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ২০ জুলাই তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং আদালতের নির্দেশে রুবেলকে জামালপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ১৪ জুলাই রুবেলের বড় ভাই প্রবাসী ফরিদুল ইসলামকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। তবে তদন্তে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুবেলই কৌশলে তার মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে সরিয়ে রেখেছিল, যাতে সে নির্বিঘ্নে মাসুদকে হত্যা করতে পারে।
ওসি সাইফুল্লাহ আরও জানান, মামলার বাদীপক্ষ প্রথমে সাতজনকে আসামি করে অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এটি ছিল মূলত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। রুবেল এককভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং নিজেই আদালতে স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদক সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। তদন্তের স্বার্থে তাদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ চলছে।