ইসলামে কয়েকটি খাত হালাল উপার্জনের

প্রকাশকালঃ ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:১৭ অপরাহ্ণ ২০১ বার পঠিত
ইসলামে কয়েকটি খাত হালাল উপার্জনের

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলোর জোগান দিতে মানুষকে বেছে নিতে হয় সম্পদ উপার্জনের বিভিন্ন পন্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেসব পেশা অবলম্বন করে তা হলো কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, শিল্প প্রভৃতি। অন্যদিকে ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম পেশা হলো বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি, নৃত্য ও যৌনশিল্প, অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন—মূর্তি, অবৈধ পানীয়, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি নির্মাণ শিল্প, সুদি কারবার, ওজনে কম দেওয়া, ধোঁকা ও প্রতারণামূলক ব্যবসা, মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ও চাকরি থেকে অবৈধ উপার্জন যেমন ঘুষ গ্রহণ ইত্যাদি।

এসবের বিপরীতে আছে অর্থ উপার্জনের বহু বৈধ খাত। মহান আল্লাহ এই পৃথিবীকে উপকৃত হওয়ার উপযোগী করে বানিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (ব্যবহারের জন্য) তৈরি করেছেন...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৯)


ব্যবসা-বাণিজ্য
উপার্জনের ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য সব চেয়ে বড় খাত। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে শুধু বৈধ বলেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...তিনি (আল্লাহ) ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

ব্যবসা-বাণিজ্যে মহানবী (সা.) পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। ৪০ বছর বয়সে নবী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করার আগেও তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বিদেশ সফরে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...আর তোমরা দেখতে পাও, নৌযান পানির বুক চিরে চলাচল করছে, যেন তোমরা তার অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা : আল ফাতির, আয়াত : ১২)


ঈমানদারের ব্যবসা-বাণিজ্যও ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘(আল্লাহর ঘরে) এমন বহু মানুষ আছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাবেচা যাদের আল্লাহর স্মরণ, সালাত কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে বিরত রাখতে পারে না...। (সুরা : আন নূর, আয়াত : ৩৭)

ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, রিজিকের ১০ অংশের ৯ অংশই ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে এবং এক অংশ গবাদি পশুর কাজে নিহিত। (আল জামিউস সাগির, হাদিস : ৩২৮১)


চাকরি
বর্তমানে চাকরি জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। জনসংখ্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংক-বীমা, এনজিও ও ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। এসব চাকরির ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৯৩)

তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সবাইকে যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি যেমন—ঘুষ গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি অন্যায়ভাবে কাউকে সুযোগ-সুবিধা দান, কারো প্রতি জুলুম করা প্রভৃতি থেকে দূরে থাকতে হবে।


কৃষিকর্ম
কৃষিকর্ম জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপার্জনের মাধ্যম। ইসলাম এটিকে মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কৃষিকার্যের সূচনা আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকে। চাষাবাদের উপযোগী করে মহান আল্লাহ এই জমিনকে বহু আগে সাজিয়ে রেখেছেন। কোরআন বলছে, ‘তুমি ভূমিকে দেখবে শুষ্ক। পরে আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করলে তা শস্যশ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং তা উদ্গত করে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৫)

এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেন, যার জমি আছে সে নিজেই চাষাবাদ করবে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৪০)

এ বিষয়ে ফতোয়া হলো, যৌথ বা ব্যক্তিগতভাবে চাষাবাদ করা ফরজে কিফায়া। কেননা এতে মানুষ ও প্রাণীর (জীবনধারণের) প্রয়োজন আছে। (আল-ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ : ৩/১২)


শিল্পকর্ম
ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি শিল্পকর্মও মানুষের অন্যতম পেশা। এই মহতী পেশায় জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়োজিত রয়েছে। এই কর্ম সম্পর্কে ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসুলরা শুধু উৎসাহের বাণী দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং শিল্প ও ব্যবসার ময়দানে তাঁদের বিশাল অবদান আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি (আল্লাহ) তাকে [দাউদ (আ.)] বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদের রক্ষা করে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮০)

উত্তরাধিকার
উত্তরাধিকারসূত্রে মানুষ অর্থ-সম্পদ লাভ করে থাকে। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা ইসলামের বিধান অনুযায়ী মৃতের পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে যে সম্পদ লাভ করে থাকে তা হালাল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে। তা কম হোক বা বেশি হোক—আছে এক নির্ধারিত অংশ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)


হেবা বা দান
কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে কোনো বিনিময় ছাড়া কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে তাকে হেবা বলা হয়। হেবা সম্পন্ন করার জন্য তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—হেবার প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি ও দখল হস্তান্তর। স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হেবা করা যায়। হেবার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ হালাল। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না, কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে না এবং সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)

মহান আল্লাহ আমাদের প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত হালাল রিজিক দান করুন। আমিন।