এই গরমেও খাবার ভালো রাখবেন যেভাবে

প্রকাশকালঃ ১৬ মে ২০২৩ ০৬:৪৫ অপরাহ্ণ ৩১৩ বার পঠিত
এই গরমেও খাবার ভালো রাখবেন যেভাবে

খাবার সংরক্ষণের জন্য আপনার চাই ছোট ছোট পাত্র। রান্নার পর ঠান্ডা করে নিতে হবে। স্টিল, কাচ, সিরামিক বা পাইরেক্স জাতীয় পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করা যায়। জেনে নিন গরমের সময় খাবার ঠান্ডা রাখার আরও নানা পদ্ধতি।

গরমে অল্প সময়েই নষ্ট হয়ে যায় খাবার, জন্মে জীবাণু। এই খাবার খেলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তিই হয়ে পড়তে পারেন অসুস্থ। সুস্থ থাকতে নিরাপদ খাবারের বিকল্প নেই। সময় ও শ্রম ব্যয় করে পরিবারের জন্য যে খাবার তৈরি করলেন, তা নষ্ট হয়ে গেলে মনটাও যেমন খারাপ হবে, তেমনি খাবারের অপচয়ও হবে। রান্নাবিদ সিতারা ফেরদৌসের কাছ থেকে জেনে নেওয়া যাক তীব্র গরমেও খাবার ভালো রাখার উপায়। 

বেশি রান্না করা হয়েছে বলেই যে বড় আকারের পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করতে হবে, এমন না। বরং আপনার পরিবারের জন্য এক বেলায় যতটুকু খাবার প্রয়োজন, একটি পাত্রে ঠিক ততটুকুই রাখুন। অর্থাৎ খাবার সংরক্ষণের জন্য আপনার চাই ছোট ছোট পাত্র। পরিবারের দুজন সদস্য হয়তো দুপুরে বাসায় খাওয়াদাওয়া করেন। একটি পাত্রে তাহলে এই দুজনের খাবার রাখুন। রাতে হয়তো চারজন খাবেন। সে ক্ষেত্রে আলাদা একটি পাত্রে চারজনের খাবার রাখতে হবে। এভাবে রান্না করা সম্পূর্ণ খাবার এমনভাবে ভাগ করে ফ্রিজে রাখুন, যাতে একটি পাত্রের খাবার গরম করার পর সেই বেলাতেই সেটি শেষ হয়ে যায়। বাটি থেকে নাড়াঘাঁটা করে খাবার বের করে বাটি আবার ফ্রিজে রাখলে কিংবা গরম করা খাবার আবার ফ্রিজে রাখলেও সহজে নষ্ট হয়ে যায়। পুরো খাবারটা ভাগ ভাগ করে রাখলে সেই ঝুঁকিটা কমবে।


রান্নার পর
খাবার সংরক্ষণ করতে হলে রান্নার পর ঠান্ডা করে নিতে হবে। রান্নার পর জালি (অর্থাৎ অনেক ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা) দিয়ে ঢেকে বাইরেই রাখুন। ঠান্ডা হওয়ার পর ফ্রিজে রাখুন। খুব তাড়া থাকলে ফ্যান ছেড়ে দিতে পারেন। খানিকটা গরম অবস্থাতেও যদি ফ্রিজে ওঠানো হয়, তাহলেও খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর পাত্রটি ফ্রিজে তুলতে দেরি করবেন না। প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে যে পাত্রে রান্না করেছেন, তাতেই আগে ঠান্ডা করে নিন। তারপর প্লাস্টিকের পাত্রে ঢালুন। স্টিল, কাচ, সিরামিক বা পাইরেক্স জাতীয় পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করা যায়। রান্নার পর চাইলে গরম অবস্থাতেই এসব পাত্রে খাবার ঢেলে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এসব পাত্র একইভাবে জালি দিয়ে ঢেকে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর ফ্রিজে ঢোকাতে হবে। প্লাস্টিকের পাত্রের চেয়ে এগুলোই স্বাস্থ্যকর। ফ্রিজে ঢোকানোর সময় যেকোনো পাত্রই ঢেকে দিতে হবে। ভাত জাতীয় খাবার, ডাল, ভর্তা-ভাজি, শাকসবজি, মাছ-মাংস—সবই এভাবে রাখতে পারেন। তবে কাঁচা পেঁয়াজ দেওয়া ভর্তা রাখা যাবে না। 

কোনটা কত দিন?
রান্না করা খাবার ফ্রিজে ৩-৬ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে বেগুন, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল প্রভৃতি সবজি এক দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলাই ভালো।

মাছ-মাংস রান্না করে একই নিয়মে ছোট ছোট বাক্সে ঢুকিয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। ডিপ ফ্রিজে কাঁচা খাবারের সঙ্গে রান্না খাবার রাখতে হলে ভালো মানের কনটেইনারে রাখুন, বাড়তি প্যাকেটে মুড়ে রাখা ভালো।

কাঁচা মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্যও এমনভাবে প্যাকেট করা ভালো, যাতে ওই প্যাকেটটা নামানো হলে একবারেই রান্না করা যায়। বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ডিফ্রস্ট অপশন ব্যবহার করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনা খাবার পুনরায় ডিপ ফ্রিজে ওঠানো উচিত নয়। 

ডিপ ফ্রিজে রাখার সময় পুঁটলির মতো না মুড়িয়ে খামের মতো ভাঁজ করে রাখলে কম জায়গায় বেশি প্যাকেট রাখতে পারবেন। কোন প্যাকেটে কী রাখা হচ্ছে, সেটি লিখে প্যাকেটের গায়ে ‘ট্যাগ’ লাগিয়ে দেওয়া ভালো। সহজে খুঁজে পাবেন। 

টাটকা সবজি ধুয়ে, পানি ঝরিয়ে, মুছে নিয়ে ছিদ্রযুক্ত বাক্স বা ঝুড়িতে করে ফ্রিজে রাখলে গড়ে এক সপ্তাহ ভালো থাকে। পলিথিনে রাখতে চাইলে সেটিও ছিদ্র করে নিতে হবে। শাক দুই দিন রেখে খেতে চাইলে অবশ্য না ধুয়েই কেটে রাখতে হবে। 


কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা না ধুয়ে সংরক্ষণ করতে হবে, তবে কাগজের বাক্স বা কাগজের ঠোঙায়। কাঁচা মরিচের বোঁটা ফেলে নিন, দিন পনেরো থাকবে। ধনেপাতা থাকবে ৫-৬ দিন। শাকসবজি কোনোটাই আঁটাআঁটি করে রাখবেন না। 

খাবারটা ভালো আছে তো?

খাবার নষ্ট হয়ে গেলে দেখতেই অন্য রকম লাগে। নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার কিছুটা মলিন ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। হালকা একটা ভ্যাপসা গন্ধও ছড়ায় প্রাথমিক অবস্থায়। গরম করলেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এমন হলে সেই খাবার কোনো মানুষ কিংবা প্রাণীকে খেতে দেবেন না। বরং প্যাকেটে মুড়ে ভালোভাবে প্যাকেটের মুখটা বন্ধ করে ফেলে দিন। নষ্ট হয়েছে সন্দেহ হলে খাবারটা নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শোঁকাও উচিত নয়।