জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছন্ন অন্তর

প্রকাশকালঃ ১৪ জুন ২০২৩ ০১:৩১ অপরাহ্ণ ২২৯ বার পঠিত
জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছন্ন অন্তর

সলামের দৃষ্টিতে বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতার মতো মানুষের আত্মিক পরিচ্ছন্নতাও অপরিহার্য। ব্যক্তির হৃদয় যদি পরিচ্ছন্ন না হয়, তবে তার পরকালীন মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যেমন আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলা হলো, ‘কোন ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশুদ্ধ অন্তরের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি। তাঁরা বলেন, সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি; কিন্তু বিশুদ্ধ অন্তরের ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, সে হলো পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ যার কোনো গুনাহ নেই, নেই কোনো দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্ম-অহমিকা ও কপটতা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১৬)

আত্মিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব 
কোরআন ও হাদিসে আত্মিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যার কয়েকটি হলো,

১. জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য : হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতা জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৭)

২. জান্নাত লাভের কারণ : মহান আল্লাহ পরকালে পরিচ্ছন্ন হৃদয়ের অধিকারীদের জান্নাত দান করবেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির ব্যাপারে জান্নাতি বলে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তী কারণ অনুসন্ধান করলে, ব্যক্তি বলে—‘আমি আমার অন্তরে কোনো মুসলমানের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করি না। আল্লাহ কাউকে কোনো কল্যাণ দান করলে আমি হিংসা করি না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৭২০)


৩. মুমিনের বৈশিষ্ট্য : মুমিনের অন্তরের পরিচ্ছন্নতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ হলো, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কোরো না এবং একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে থেকো না, বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থাকো; কোনো মুসলিমের জন্য তাহার কোনো মুসলিম ভাইকে তিন রাতের অধিক ত্যাগ করা বৈধ নয়।’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৪)

৪. সাফল্যের মাপকাঠি : নবী-রাসুলদের পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ছিলেন পরিচ্ছন্ন অন্তরের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাজিরদের যা দেওয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না, আর তারা তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৯)

৫. আমলের মূল্য নির্ধারণকারী : সাহাবায়ে কেরাম (রা.) অন্তরের পরিচ্ছন্নতাকে অধিক পরিমাণ আমল করার চেয়ে গুরুত্ব দিতেন। ইয়াস বিন মুয়াবিয়া বিন কুররা (রা.) বলেন, ‘তাদের কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি বিবেচিত হতো যার অন্তর বেশি পরিশুদ্ধ ও পরনিন্দা কম করত।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৬১৯৪)


৬. পরকালীন মুক্তির উপায় : পরকালীন মুক্তির সবচেয়ে বড় অবলম্বন হবে পরিচ্ছন্ন হৃদয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না; সেদিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর কাছে আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।’ (সুরা আশ-শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

৭. অধিক প্রতিদান লাভের উপায় : অন্তরের পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ব্যক্তি অল্প আমলের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ প্রতিদান লাভ করে থাকে। সুফিয়ান বিন দিনার (রহ.) আবু বশির (রহ.)-কে বলেন, আমাকে পূর্বসূরিদের আমল সম্পর্কে বলুন, ‘তারা অল্প পরিমাণ আমল করতেন এবং অধিক পরিমাণ প্রতিদান পেতেন।’ আমি বললাম, এর কারণ কী? তাদের অন্তরের পরিচ্ছন্নতার জন্য।’ (আল-জুহুদ, পৃষ্ঠা ২৩৮)

আল্লাহ সবার অন্তরকে পরিচ্ছন্ন করে দিন। আমিন