একজন মুমিনের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। মুমিন মাত্রই এই নামাজ যত্নের সঙ্গে আদায় করে থাকে। কিন্তু শয়তান অনেককে ধোঁকা দিয়ে মন ও মননে নামাজের ব্যাপারে গাফিলতি সৃষ্টি করতে চায়। নামাজ থেকে দূরে রাখতে চায়।
প্রতি ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে আলাদা আলাদা গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তবে আসরের নামাজের ব্যাপারে এই গুরুত্ব আরো বেশি দেওয়া হয়েছে। কারণ, আসর বিশেষ গাফিলতির সময়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘তোমরা সব নামাজ এবং মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি যত্নবান হও।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৮)
আর মধ্যবর্তী নামাজের অর্থ হলো আসরের নামাজ। আসরের নামাজের আগেও দুই ওয়াক্ত নামাজ রয়েছে, পরেও দুই ওয়াক্ত নামাজ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে কিছু জিনিসের কসম করেছেন। তিনি যেসব জিনিসের কসম করেছেন, নিশ্চয়ই সেগুলো আল্লাহর কাছে দামি। তিনি কোরআন মাজিদে আসরের কসম করেছেন। ‘আসরের কসম।’ (সুরা : আসর, আয়াত : ১)
উল্লিখিত দুটি আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার কাছে আসরের নামাজ কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আরেক আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘আপনার রবের প্রশংসা করুন সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগে।’ (সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ১৩০)
এই আয়াতে সূর্যোদয়ের আগে মানে ফজর এবং সূর্যাস্তের আগে মানে আসর, এই দুই নামাজের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাদিসে এই নামাজের বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ফেরেশতারা পালাবদল করে তোমাদের মধ্যে আগমন করেন। একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের নামাজে উভয় দল একত্র হয়।
তারপর তোমাদের মধ্যে রাত যাপনকারী দলটি যখন উঠে যায়, তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় দেখে এলে? অবশ্য তিনি নিজেই বান্দাদের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত। জবাবে ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাদের নামাজরত দেখে এসেছি। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখনও তারা নামাজরত ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩২)
সুতরাং যে ব্যক্তি নিয়মিত ফজর ও আসরের নামাজ জামাতে আদায় করে, ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার কাছে তার ব্যাপারে প্রতিদিন বলছে, আমরা যখন পৃথিবীতে গিয়েছি, তাকে নামাজরত দেখেছি। যখন পৃথিবী থেকে এসেছি, তখনও তাকে নামাজরত দেখেছি। এ ছাড়া আরেক হাদিসে এসেছে, জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমরা একবার নবীজির কাছে বসা ছিলাম।
হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, অচিরেই তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেভাবে চাঁদ দেখতে পাচ্ছো। আল্লাহকে দেখতে কোনো ধরনের ভিড়ের সম্মুখীন হবে না। যদি এ নিয়ামত লাভ করতে চাও, তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগের (ফজর ও আসর) নামাজের প্রতি যত্নবান হও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৫১)
অবশ্য আসরের নামাজের ব্যাপারে শুধু ফজিলতই নয়, হাদিসে ধমকিও এসেছে। নবীজি (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ছেড়ে দিল, তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৫৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের আসরের নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।