হজের পাঁচ দিনে যা করণীয়

প্রকাশকালঃ ১৭ মে ২০২৩ ০৬:০১ অপরাহ্ণ ৪৪৬ বার পঠিত
হজের পাঁচ দিনে যা করণীয়

জ ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...এবং আল্লাহর ঘরের দিকে পথ ধরতে যে সক্ষম তার জন্য ওই ঘরের হজ করা অবশ্য কর্তব্য...।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ ও ওমরা পূর্ণ করো...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৬)

হজ একই সঙ্গে অর্থনৈতিকও শ্রমসাধ্য ইবাদত। আবার সচরাচর হজের পূর্ব-অভিজ্ঞতা থাকে খুব কম মানুষের, তাই হজের বিধানগুলো জেনেশুনে সতর্কতার সঙ্গে পালন করতে হয়। এ জন্য হজে একান্ত যা দরকার, সে প্রসঙ্গে আলোচ্য নিবন্ধে আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো, ইনশাআল্লাহ।

হজের প্রস্তুতি : হজের প্রস্তুতি হিসেবে সফর শুরুর আগে একজন হাজিকে কয়েকটি কাজ করা উচিত। ১. হজ বিষয়ক একটি প্রামাণ্য বই সঙ্গে নেওয়া। ২. মক্কায় পৌঁছে সর্বপ্রথম কী করতে হবে জেনে নেওয়া। ৩. হজের ফরজ-ওয়াজিবগুলো ভালো করে জেনে বা লিখে নেওয়া। ৪. ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত (পাঁচ দিন) হজের বিধিবিধানগুলো ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া। ৫. হজ থেকে বিদায়ের (মক্কা থেকে বিদায়ের) কাজগুলো ভালোভাবে অবগত হওয়া।


হজের চার ফরজ :

১. হজের নিয়তে ইহরাম পরিধান করা ও তালবিয়া পাঠ করা (একবার)।


২. ৯ জিলহজ আরাফায় (কিছু সময়ের জন্য) অবস্থান করা (রাত বা দিনে যদি অবস্থান করতে না পারেন তবে তার হজ হবে না)।

৩. তাওয়াফে জিয়ারত বা ফরজ তাওয়াফ (প্রথম চার চক্কর ফরজ ও পরের তিন চক্কর ওয়াজিব)। 


৪. এ ফরজগুলো সুনির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ধারাবাহিকভাবে করা।

হজের ওয়াজিব ৯টি :

১. সাফা-মারওয়ার মাঝে দ্রুত চলা।

২. মুজদালিফায় অবস্থান করা।

৯ জিলহজ (আরাফাতে অবস্থানের দিন) দিবাগত রাতের যেকোনো সময় মুজদালিফায় পৌঁছা এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা।

৩. শয়তানের স্তম্ভে (জুমরাত) পাথর নিক্ষেপ করা (যা রমি নামে পরিচিতি)।

৪. মক্কার চারপাশে ইরহাম পরিধানের যে নির্দিষ্ট স্থান সে পরিসীমার বাইরে যাদের অবস্থান তাদের জন্য মক্কা শরিফে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম কাবা জিয়ারত করা। বাংলাদেশের হাজিদের জন্যও এটা ওয়াজিব (তাওয়াফে কুদুম)।

৫. বিদায়ী তাওয়াফ করা (কাবা থেকে শেষ বিদায়ের সময় হজ থেকে ফেরার দিন তাওয়াফ করা, এটা বাহিরাগত হাজিদের জন্য ওয়াজিব। সুতরাং বাংলাদেশি হাজিদের জন্যও ওয়াজিব।

৬. মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা। (সাবধান ইহরাম মুক্ত হয়ে অন্যের মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা যাবে, নচেৎ নয়)।

১০ জিলহজ শয়তানের বড় স্তম্ভে (জুমরাতে উকবা) পাথর মারার পর মাথা মুণ্ডন করা বা চুল খাটো করে নেওয়া।

৭. কোরবানি দেওয়া (বহিরাগত হাজিদের জন্য এটা ওয়াজিব)। 

৮. দুই নামাজ একত্রে পড়া (আরাফায় জুহর-আসর ও মুজদালিফায় মাগরিব-এশা)।

৯. পাথর মারা (রমি) ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা ধারাবাহিকভাবে করা।

হজসংশ্লিষ্ট কাজের ধারাবাহিক বর্ণনা :

১. মিকাতের আগে (সন্ধিগ্ধ হলে বিমানে আরোহণের আগে) ইহরাম বাঁধা।

২. মক্কা শরিফে পৌঁছে জিনিসপত্র নিজ নিজ কক্ষে রেখে অজু করে মুয়াল্লিমের সঙ্গে কাবা শরিফে যাওয়া।

৩. কাবা তাওয়াফ করা তথা সাতবার কাবা প্রদক্ষিণ, পারলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন, সম্ভব না হলে হাতে ইশারা করে হাতের ওপর চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করা।

৪. কাবাঘরকে সাত চক্কর দ্রুত প্রদক্ষিণ করা (রমল), তাওয়াফের সময় ইহরামের চাদর ডান হাতের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে রাখতে হবে যেন ডান কাঁধ ও বাহু উন্মুক্ত হয়ে থাকে (ইজতিবাহ)। এ দুটি আমল তাওয়াফের সুন্নাহ, যা তাওয়াফে জিয়ারত ও ওমরাহর সময়ও  করা সুন্নত।

৫. সাফা-মারওয়ার মাঝে সাই করা বা দৌড়াতে হবে সাতবার; শুরু হবে সাফা পর্বত থেকে শেষ করতে হবে মারওয়ায় গিয়ে।

৬. মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটানো। এসব সুসম্পাদনের পর হজের দিন-কয়েক বাকি থাকলে ইহরামমুক্ত হয়ে মদিনা শরিফ যাওয়া যায়। হজের আগে ইহরাম থেকে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করাকে হজে তামাত্তু বলা হয়।

হজের মূল সময়ের কাজ

৮ জিলহজের আমল : এদিন আপন কক্ষে অথবা কাবাঘরে বসে ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফ থেকে মুয়াল্লিমের অধীনে মিনায় পৌঁছতে হবে। এখানে এ দিন জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা এবং পরদিন ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন।

৯ জিলহজের আমল : এদিনের ধারাবাহিক কাজ হলো :

১. সকালে মিনা থেকে রওনা হয়ে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছতে হবে এবং জোহর-আসর একসঙ্গে পড়তে হবে।

২. গভীর মনোযোগে খুতবা শুনবেন এবং খুতবার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত তালবিয়া, তাহমিদ, দুয়া-দরুদ, ইস্তিগফার, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে থাকবেন, ৩. সুর্যাস্তের পর মাগরিব না পড়েই মুজদালিফায় রওনা হবেন। রাত যতক্ষণই হোক মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব-এশা একসঙ্গে পড়বেন। মাগরিবের সময় চলে যাচ্ছে ভেবে যাত্রাবিরতি করা যাবে না; বরং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব এশা একত্রে পড়া হজের বিধান।

৪. এ রাতে (০৯ তারিখের দিবাগত রাত) মুজদালিফায় বিশ্রাম নেবেন বা ঘুমাবেন। ফজর পড়ে সূর্যোদয়ের আগে ফের মিনার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

৫. মুজদালিফা থেকে কমপক্ষে ৪৯টি পাথর সংগ্রহ করে সঙ্গে আনতে হবে।

১০ জিলহজের আমল :

১. মুজদালিফা থেকে মিনায় পৌঁছতে হবে।

২. এদিন শুধু বড় শয়তানের স্তম্ভে (জুমরাতে উকবা) সাতটি পাথর নিক্ষেপ করবেন। অন্য স্তম্ভে পাথর মারা যাবে না।

৩. জুমারাতে পাথর মারার পর কোরবানির সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কোরবানি দিতে হবে। (ক্ষতিপূরণ কোরবানি ও নফল কোরবানিও করা যাবে)।

৪. কোরবানি করার পর মাথা মুণ্ডাতে বা চুল খাটো করতে হবে।

৫. এদিন পুর্বোক্ত কাজ করার পর তাওয়াফ ও তাওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। (অবশ্য ভিড় এড়ানোর জন্য এ তাওয়াফ ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে) ১২ তারিখ সকালে তিনটি স্তম্ভে পাথর মেরে মিনা থেকে চূড়ান্ত বিদায় নিয়ে মক্কা শরিফে এসেও এ ফরজ তাওয়াফ করার সুযোগ থাকে।

১১ জিলহজের আমল : শয়তানের তিনটি স্তম্ভে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে।

১২ জিলহজের আমল : তিন স্তম্ভে আবার সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। এভাবে পাথর মারার সংখ্যা ১০ জিলহজ সাতটি, ১১ জিলহজ সাতটি করে ২১টি এবং ১২ জিলহজে সাতটি করে ২১টি পাথর মারতে হবে।

উল্লেখ্য, ১০ ও ১১ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত করতে না পারলেও ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে এবং ১১ জিলহজ পাথর মারতে হবে ও ছোট থেকে বড় স্তম্ভের দিকেই যেতে হবে। ১২ তারিখের পর হাজি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন। ১০ তারিখ মাথা মুণ্ডানোর পর ইহরাম অবস্থার সমাপ্তি ঘটবে। তবে তাওয়াফে জিয়ারতের আগে স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।