চারটি কর্মসূচি দিয়ে যাত্রা শুরু। ১৮–৫০ বছর বয়সীদের পাশাপাশি ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) এত দিনে বাস্তব রূপ পাচ্ছে। ১৭ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত এ কর্মসূচি। উদ্বোধনের দিন থেকেই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হবে সবার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে আরও থাকবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কবিরুল ইজদানী খান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মঙ্গলবার তাঁর কার্যালয়ে বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন শুধু উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। এগুলোর নাম হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’ শীর্ষক কর্মসূচি চালু করা হবে।
উদ্বোধনের দিন কিছু গ্রাহক যাতে অনলাইনে পেনশন কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, সে জন্য দেশের আটটি জেলার প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে তাঁদের মডেল পেনশনার প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে গোপালগঞ্জ, সিলেট, রংপুর, পাবনা, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি ও বরগুনা। পেনশন কর্তৃপক্ষ একই ধরনের চিঠি দিয়েছে কুয়ালালামপুর ও জেদ্দায় থাকা বাংলাদেশ মিশনেও।
পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান গতকাল জানান, তাঁর জেলার মডেল পেনশনার ইতিমধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকই এ ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন এবং ৬০ বছর বয়স থেকে তাঁরা আজীবন পেনশন পাবেন। শুরুর দিকে চিন্তা না থাকলেও পরে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদেরও পেনশন কর্মসূচির আওতায় রাখার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা টানা ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পরই পেনশন সুবিধা পাবেন।
কোন পেনশনে চাঁদা কত
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘প্রগতি’ ও ‘সুরক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ‘প্রবাসী’ কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদার হার ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। এই কর্মসূচিতে মার্কিন ডলার, ইউরো, কুয়েতি দিনার, সৌদি রিয়াল ইত্যাদি মুদ্রায় চাঁদা দিতে হবে।
প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) মতো এ ক্ষেত্রেও সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তা বাদ দেওয়া হয়। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া যায় না। ‘সমতা’ কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা। এ কর্মসূচিতে সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫০০ টাকা করে চাঁদা দেবে সরকার।
বিকাশ–নগদেও চাঁদা দেওয়া যাবে
পেনশন কর্মসূচির আওতায় চাঁদা দেওয়া যাবে ঘরে বসেই। এ জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, যাঁরা সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে চান, তাঁদের আগে নিবন্ধন করতে হবে।
নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে সব সময় চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করতে হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধনে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলো। ব্যাংকের পাশাপাশি নগদ, বিকাশসহ যেকোনো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চাঁদা পরিশোধের সুযোগ রাখা হচ্ছে।
পাঁচটি এমওইউ সই
পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গতকাল সচিবালয়ে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড।
এদিকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের তিনটি বিধিমালা হচ্ছে। এসব বিধিমালার খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধনের আগে এগুলো নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানা গেছে।