ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সাবেক এক সেনাসদস্যের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সেনাসদস্য ও তার স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে বেঁধে রেখে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে ৭-৮ সদস্যের ডাকাতদল। সোমবার (৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন গ্রামে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
তবে পুলিশ এ ঘটনাকে চুরি আখ্যা দিয়ে ডাকাতির মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, ‘এটা ডাকাতি নয়, চুরি কিংবা দস্যুতা।’
ভুক্তভোগী সাবেক সেনাসদস্যের নাম আব্দুর রশিদ পাটোয়ারী (৬২)। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন কিশামত পুনকর গ্রামের বাসিন্দা।
সেনাসদস্যের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, ‘ডাকাতদল ঘরে ঢুকে আমার স্বামীর হাত-পা বাঁধে। ছোরা হাতে চিল্লাইতে নিষেধ করে আমার শরীরের অলংকার খুলে নেয়। চাবি নিয়ে আলমারি তছনছ করে টাকাপয়সা স্বর্ণ-গয়না নিয়ে চলে যায়।’
সাবেক সেনাসদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ শব্দ শুনে জেগে দেখি ঘরের ভেতর ৭-৮ জন যুবক। তারা সকলে মুখোশ পরিহিত। হাতে ছোট টর্চলাইট। তারা ছোরা ধরে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বেঁধে ফেলে। পাশে আমার স্ত্রীকেও বেঁধে ফেলে। চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ত্রীর শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার খুলে নেয়। চাবি নিয়ে ঘরের আলমারিতে থাকা নগদ ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ঘটনা ঘটেছে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে। তারা যাওয়ার সময় ঘটনা নিয়ে কাউকে কোনোকিছু জানাতে বারণ করে গেছে। জানালে পরে আবার এসে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। অস্ত্রের মুখে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।’
ওই সেনাসদস্য জানান, ঘটনার রাতে তারা স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক স্কুলশিক্ষক ভাতিজি বাড়িতে ছিলেন। ঘরের পুরাতন দরজা ছিটকিনি দেওয়ার পাশাপাশি ঠেস দেওয়া ছিল। সেই দরজা বাইরে থেকে চাপ প্রয়োগ করে ভেঙে ভেতরে ঢোকে ডাকাতদল। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পরপরই তার ভাতিজি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশে খবর দেন। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যায়। পরে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ও সন্ধ্যায় আরও তিন দফায় ওসি ও কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বসতঘর পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে থানায় ডাকেন। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ ঘটনাকে চুরি উল্লেখ করে মামলা করতে বলে। ডাকাতি উল্লেখ করলে ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে সাবেক এই সেনাসদস্য আরও বলেন, ‘৭-৮ জনের ডাকাতদল মুখোশ পরে, অস্ত্র হাতে জিম্মি করে সব লুট করে নিয়ে গেলো। অথচ পুলিশ বলছে ডাকাতির মামলা নেবে না। দুই দিন থানায় গিয়ে ফিরে আসছি কিন্তু পুলিশ ডাকাতির অভিযোগের এজাহার নেয়নি। আমার ধারণা, ডাকাতি বললে পুলিশের মানসম্মান যাবে। তাদের এসিআরে দাগ পড়তে পারে এজন্য ডাকাতি মামলা নিচ্ছে না। কিন্তু আমি ডাকাতির ঘটনার ডাকাতির বিচার চাই, চুরির নয়।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ডাকাতি মনে হয়নি। চুরি কিংবা দস্যুতা হতে পারে। তাই ডাকাতির অভিযোগে এজাহার নেওয়া হয়নি।’
ডাকাতি ও দস্যুতার পার্থক্য আছে জানিয়ে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘যেহেতু ভাঙচুর হয়নি, তেমন অস্ত্র ছিল না তাই ডাকাতি নয়। এটা দস্যুতা অথবা চুরি। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন স্যারেরা জানেন। সে মোতাবেক ডাকাতি নয়, চুরি হিসেবে অভিযোগ দিতে বলেছি। কিন্তু জিনিস উদ্ধার ও অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি না করে তারা (ভুক্তভোগী পরিবার) ডাকাতির মামলা কেন করতে চাচ্ছেন, এটা বুঝে আসছে না।’