ব্যক্তির উপার্জিত অর্থ নিজে একা ভোগ না করে তা পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন তথা সাধ্যমতো অন্যের জন্য ব্যয় করার তাগিদ দেয় ইসলাম। তবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নীতির প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও স্ত্রী-সন্তানের হক আগে প্রতিষ্ঠিত হবে। স্ত্রীর ভরণ-পোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর।
আল্লাহ বলেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিজিক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে। আল্লাহ যাকে যতটা দিয়েছেন তার অতিরিক্ত বোঝা তার ওপর চাপান না। আল্লাহ কষ্টের পর সহজ করে দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৭)
তিনি আরো বলেন, ‘আর জন্মদাতা পিতার দায়িত্ব হলো, ন্যায়সংগতভাবে প্রসূতি মায়েদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
হাকিম ইবনু মুআবিয়াহ আল-কুশাইরি থেকে তার পিতার সূত্রে বলেন, একবার আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ‘আমাদের কারো ওপর তার স্ত্রীর কি হক আছে? তিনি বলেন, তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দেবে। তার মুখমণ্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না। আর তাকে পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২)
তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২২)
কারো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে যদি তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করতে কৃপণতা করে তাহলে সে পাপী হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার ওপর নির্ভরশীলদের রিজিক নষ্ট করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯২)
অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির পাপের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে যাদের খোরপোষ তার দায়িত্ব সে তাদের খোরপোষ আটকিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৯৬)
এ ধরনের লোককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সে তা সংরক্ষণ করেছে, না তাতে অবহেলা করেছে? এমনকি পুরুষকে তার স্ত্রী (পরিবার-পরিজন) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৯১৭৪)
পক্ষান্তরে পরিবারের জন্য খরচকৃত অর্থের ফজিলত অনেক বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম হলো ওই দিনার (প্রাচীন আরব্য মুদ্রা), যা কোনো ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৯৪)
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘এক দিনার, যা তুমি আল্লাহর পথে খরচ কর। এক দিনার দরিদ্রদের জন্য, এক দিনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং এক দিনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য। এগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সওয়াব অর্জনকারী ওই দিনার, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করো।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১০১৩২)
আর পরিবারের জন্য খরচ করা অর্থ সদকার অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫)
এমনকি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যে পানি পান করায় তার জন্যও তার নেকি আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে পানি পান করায় তখন সে তার বিনিময়ে সওয়াব পায়।’ (সহিহ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ১৯৬৩)
স্বামী সাধ্যমতো স্ত্রীকে পোশাক-পরিচ্ছদ দেবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আর তোমাদের ওপর তাদের অধিকার এই যে তোমরা (যথাসম্ভব) তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও আহারের সুব্যবস্থা করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩ ও ৩০৮৭)