বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে শুরু থেকে চোখে পড়ার মতো তৎপরতা দেখা গেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। শুরুতে তাঁরা দলীয় প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। এর মূল কারণ ছিল বিএনপির নির্বাচন বর্জনে দলটির ভোটারদের বড় একটি অংশের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ও মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরোধ।
কিন্তু দুটি কারণে ভোটের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর ইসলামী আন্দোলনের সেই আশা অনেকটাই ম্লান হতে শুরু করেছে। এর একটি হলো, বিএনপি ঘরানার কামরুল আহসানের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া। অন্যটি, মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে দলটির একটি পক্ষ ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে প্রার্থী হতে ইন্ধন দিয়েছেন—এমন গুঞ্জন।
কামরুল আহসান বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে। আহসান হাবিব কামাল বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি গত বছর মারা যান।
কামরুল আহসান প্রার্থী হওয়ায় ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বও চিন্তায় পড়েছেন, যদিও তাঁরা প্রকাশ্যে এটা স্বীকার করছেন না। দলটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল মঙ্গলবার বলেন, অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপি-জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় কামরুল আহসান শেষ পর্যন্ত বড় অংশের ভোট পেয়ে যেতে পারেন। এটা শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে বিষয়টা নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম ঢাকা থেকে বরিশালে এলে দলের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। গত ৮ মে বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পাঁচ সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক আশরাফ আলী আকন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামরুল তো বিএনপির কেউ নন। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপিমনা ভোটাররা কেন তাঁকে ভোট দেবেন? ভোটের মাঠে যে সাড়া, তাতে সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ আমাদের ভোট দেবে।’
বরিশাল নগরের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেন—এমন একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মুফতি ফয়জুল করিম যে ভোট পেয়েছিলেন, তার বেশির ভাগ ইউনিয়নগুলোর। ফলে বরিশাল নগরে ইসলামী আন্দোলনের দলীয় ভোট খুব বেশি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে বিভেদ এবং বিএনপি ভোট বর্জনকে মাথায় নিয়ে দলটির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের ইন্ধন আছে বলে যে গুঞ্জন, সেটি হয়তো ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে না–ও যেতে পারে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, শুরুতে যেভাবে ইসলামী আন্দোলন শোডাউন করেছে, তাতে মনে হয়েছিল বরিশালের ভোটের রাজনীতিতে দলটি নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার জন্য মাঠে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে এই নির্বাচনকেই তারা উপযুক্ত সময় মনে করেছিল। কিন্তু ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সেই সম্ভাবনা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কারণ, বিএনপি মাঠে না থাকলেও কামরুল আহসানের বাবার রাজনৈতিক পরিচয় তাঁকে ভোটের মাঠে সুবিধা দেবে। আর ভোটে মাঠে থাকা বিএনপির নেতারাও চাইবেন না বরিশালের রাজনীতিতে ইসলামী আন্দোলন তাঁদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠুক।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ইসলামী আন্দোলনের শুরুর দিকের সম্ভাবনায় অনেকটা ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে, বিষয়টি আরও বেশি স্পষ্ট হবে।