মূর্খতার কুফল ধর্মীয় জীবনে

প্রকাশকালঃ ০৭ আগu ২০২৩ ০৪:১৬ অপরাহ্ণ ২২৪ বার পঠিত
মূর্খতার কুফল ধর্মীয় জীবনে

কারো প্রতি ভিত্তিহীন সংশয় পোষণ করা এবং না জেনে কারো প্রতি অপবাদ দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ। বিশেষভাবে যখন কারো ঈমানের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করা হয়। কেননা ব্যক্তির ঈমানের ওপর তার ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের পরিণতি নির্ভর করে। এ ছাড়া ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বহু বিষয় ঈমানের সঙ্গে জড়িত।

তাই কারো ঈমানের ব্যাপারে সংশয় পোষণের আগে যথাযথ প্রমাণ প্রয়োজন। অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবই মানুষের মনে ভিত্তিহীন সংশয় তৈরি করে।

মূর্খতার সঙ্গে সংশয় পোষণের সম্পর্ক
কারো ঈমানের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করা এবং বাছ-বিচার না করে কাফের আখ্যা দেওয়া খারেজি সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য। আর খারেজি সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা বলেন, তাদের বেশির ভাগই ছিল মূর্খ।

তারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেনি এবং জ্ঞানীদের সান্নিধ্যও গ্রহণ করেনি। তারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে পারস্পরিক আলোচনাকেই যথেষ্ট মনে করেছে। মানসিক সংকীর্ণতা ও ভ্রান্ত চিন্তা-ভাবনা তাদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে দেয়নি। (তারিখুল ইরাক, পৃষ্ঠা ১৭৫)

মূর্খদের থেকে কেউ নিরাপদ নয়
মূর্খদের সংশয় ও মন্দ আচরণ থেকে কেউ নিরাপদ নয়। তারা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিও আঙুল তুলেছিল। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, একবার নবীজি (সা.) সাহাবিদের মধ্যে স্বর্ণের টুকরা বণ্টন করলে এক ব্যক্তি বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহকে ভয় করুন। নবী (সা.) বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি অধিক হকদার নই?’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৫১)


জ্ঞানের প্রতিফলন না থাকাও মূর্খতা
জ্ঞান যদি ব্যক্তির জীবনে প্রভাব ফেলতে না পারে তবে তা মূর্খতারই নামান্তর। এটা তাঁর দ্বিন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। উল্লিখিত হাদিসের শেষভাগে এসেছে, ‘তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে।

তিনি বললেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন জাতির উদ্ভব হবে, যারা শ্রুতিমধুর কণ্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে, অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বিন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৫১)

অপব্যাখ্যা মূর্খতার শামিল
দ্বিনের ব্যাপারে ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যাও মূর্খতার শামিল। মনগড়া ব্যাখ্যাকে ভিত্তি করেই খারেজি সম্প্রদায় বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিল। আল্লামা কাসিম বিন সালাম খারেজিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে দ্বিন থেকে বের হয়ে গেছে। তারা সগিরা ও কবিরা গুনাহের কারণে মানুষকে কাফের আখ্যা দেয়।’ (আল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭৬-৭৭)

অন্যদের করণীয়
অকাট্য প্রমাণ ছাড়া মুমিন কারো ঈমান ও ইসলাম নিয়ে সংশয় পোষণ করবে না। কেননা উল্লিখিত ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করার পরও রাসুলুল্লাহ (সা.) তার বাহ্যিক ঈমানকে গুরুত্ব দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না; হতে পারে সে নামাজ পড়ে। খালিদ (রা.) বললেন, অনেক নামাজ আদায়কারী এমন আছে, যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে, যা তাদের অন্তরে নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেড়ে দেখতে বলা হয়নি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৩৫১)