ঢাকা প্রেস
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছেন, যদি বেতনে পোষায় না, তবে অন্য পেশা বেছে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চট্টগ্রাম এ সভার আয়োজন করে।
ডা. বিধান রঞ্জন বলেন, “শিক্ষকতা পেশাকে শুধু অর্থমূল্যে বিচার করা যাবে না। সমাজে শিক্ষকদের যে সম্মানজনক স্থান, তা অটুট রাখতে হলে এ পেশার প্রতি আন্তরিক হতে হবে। তবে যদি কেউ মনে করেন বেতন-ভাতা তাঁর প্রয়োজন মেটাচ্ছে না, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা হয়, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা দেখা যায় না। এই চিত্র পাল্টানোর দায়িত্ব শিক্ষকদেরই নিতে হবে।”
ডা. বিধান রঞ্জন জানান, সব বেসরকারি বিদ্যালয়কে নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে। তিনি বলেন, “যেসব স্কুল নিবন্ধিত নয়, তাদের পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হলেও নিবন্ধন না থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় অনেক মেধাবী শিক্ষক পাচ্ছি এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, শ্রেণিকক্ষে এর ফলাফল দেখা যায় না। অনেকেই কর্মসংস্থানের অভাবে এ পেশায় আসছেন। ফলে বেতন-ভাতা নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, “সহকারী শিক্ষক হিসেবে যারা যোগ দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই একই পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন। পদোন্নতির সুযোগ না থাকা বা বেতন কাঠামো উন্নয়ন না হওয়া হতাশাজনক। যদিও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বেতন কাঠামোতে এর প্রতিফলন ঘটেনি। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
ডা. বিধান রঞ্জন শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “পেশায় থেকে কোনো অজুহাতে দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়া ঠিক নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি তাদের হাত ধরেই গড়ে ওঠে। এ কাজের মূল্য অর্থ দিয়ে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।”
তিনি শিক্ষকদের প্রতি শ্রেণিকক্ষ ও পেশার প্রতি আন্তরিক থাকার আহ্বান জানান এবং শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য আরও মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দেন।