ডেস্ক নিউজ-ঢাকা প্রেস
‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা আজ (মঙ্গলবার) চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি)।
পিআইডি চট্টগ্রামের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দীন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম পিআইডির সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা বাপ্পী চক্রবর্তী।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়— গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ এবং সাংবাদিকরা সমাজের বিবেক। সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা, বঞ্চনা ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যমই সমাজে ন্যায় ও সমতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। তাই গণমাধ্যমকে কখনো পথ হারালে চলবে না; বরং প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য বা ‘ফেইক নিউজ’ সমাজে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। এ ধরনের ভ্রান্ত তথ্যের কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং না জেনে শুনে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে। ফলে সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তাই গণমাধ্যম কর্মীদের আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হতে হবে— কোনো সংবাদ প্রকাশের আগে তা যাচাই-বাছাই করা জরুরি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তথ্য অধিদফতর গুজব প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ‘ফ্যাক্ট চেকিং টিম’ গুজব শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করছে। চাঁদপুরের সাংবাদিকরাও চাইলে গুজব রোধে পিআইডির সহযোগিতা নিতে পারেন।
সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন, মনোয়ার কানন, শরিফুল ইসলাম, রিয়াজ ফেরদৌস, মো. ইলিয়াস, নজরুল ইসলাম, ওয়াদুদ রানা, ফারুক আহমেদ, শাহরিয়ার পলাশ ও জেলা তথ্য কর্মকর্তা তপন চন্দ্র বেপারী।
বক্তারা সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, সাংবাদিকদের যোগ্যতা নির্ধারণ, তরুণদের সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত করা, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক নীতি প্রণয়ন এবং গণমাধ্যমে তরুণদের সাফল্যের গল্প তুলে ধরার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা মত দেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য পিআইডির মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সংবাদপেশার মান আরও উন্নত হবে।
প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “৭১-এর আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন, আর ২০২৪ সালের আন্দোলন হয়েছে সুশাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা সবাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। আমাদের কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে, আর গণমাধ্যমের কাজ হলো নির্ভয়ে সেই ত্রুটি তুলে ধরা। তাহলেই সমাজ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যম যদি সঠিক ও যাচাইকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে না ধরে, তাহলে রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে। সমাজের প্রান্তিক মানুষের না বলা কথা অনুচ্চারিত থেকে যাবে। তাই গণমাধ্যমকে সত্যনিষ্ঠ, সাহসী ও দায়িত্বশীল হতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোঃ সাঈদ হাসান গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে নিহত ও আহত সাংবাদিকদের মাঝে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ৫৪ লাখ টাকারও বেশি অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিকদের জন্য অবসরভাতা এবং সাংবাদিকতায় ফেলোশিপ প্রদানের ব্যবস্থাও চালু রয়েছে।”