অনলাইন ডেস্ক:-
গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের ওপর শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সে বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR)কে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে এবং OHCHR-এর স্বাধীন তদন্তে গত মাসগুলোর ঘটনায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "তৎকালীন সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহিংস গোষ্ঠীগুলি পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল, যার মধ্যে কয়েকশ’ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে শারীরিক নিপীড়ন ও অত্যাচার, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং অন্যান্য নির্যাতন অন্তর্ভুক্ত।"
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, "বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মিলিটারি রাইফেল এবং শটগানে নিহত হয়েছেন, যা সাধারণত বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া, কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, কেউ কেউ আজীবন পঙ্গু হয়ে গেছেন।"
এছাড়া, প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী ১১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু ছিল। প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে, "শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিকভাবে আটক এবং নির্যাতন করা হয়েছে।"
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, "বিশ্বস্ত তথ্য অনুযায়ী, সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে একত্রে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছিল। তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল।"
এই প্রতিবেদন তৈরিতে যেসব অনুসন্ধানকারী কাজ করেছেন, তাদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, "বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও নিয়মিত আদালতে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তবে কাঠামোগত ত্রুটির কারণে কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।"
জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন সমুন্নত রাখার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি পুলিশ, প্রসিকিউটর এবং বিচারকদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে সবাই নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে, এবং এজন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"