আরাভ খান ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফাঁদ পাততেন

প্রকাশকালঃ ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৩:২৪ অপরাহ্ণ ১৬০ বার পঠিত
আরাভ খান ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফাঁদ পাততেন

দুবাইয়ে সোনার দোকান চালু করে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান একসময় ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও চাকরিজীবীদের ফাদে ফেলতেন। নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে টাকা আদায় করাই ছিল তার লক্ষ্য। এমনই একটি ফাদে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন এমরান খান বনানীতে রবিউলের ফ্ল্যাটে গিয়ে খুন হয়েছিলেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলচ্চিত্রের একজন প্রযোজক ও রবিউল মিলে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও নিকেতনে অনেকগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা ও বিভিন্ন মানুষকে ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেল করতেন। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারত হয়ে দুবাই যান রবিউল। সেখানে গিয়েও একই কাজ করছেন। ব্যবসার আড়ালে দেশ থেকে নারীদের দুবাই নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে, ড্যান্স ক্লাবে দেহ ব্যবসা করান তিনি।

২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকার বনানীর রবিউল ও এক প্রযোজকের ভাড়ার ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা করা হয়। না পেরে তাকে হত্যা করেন রবিউল ও তার সহযোগীরা। পরে রবিউলের আনা বস্তায় ভরে গাজীপুরের একটি জঙ্গলে নিয়ে পোড়ানো হয় মামুনের লাশ।

ওই ঘটনার তিন দিন পর নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।হত্যা মামলার আগে নিহতের পরিবার ঢাকার সবুজবাগ থানায় মামুন নিখোঁজ বলে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। তাই বনানী এলাকায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবির খিলগাঁও দলকে। সেই সময়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র ও ঘটনা নিয়ে পুলিশের ওয়াকিবহাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামুন হত্যার ঘটনায় রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে সে সময় আটক করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কিন্তু আটকের তিন দিন পর তাকে গ্রেপ্তার না দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সূত্রে আরও জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের তৎকালীন এক প্রভাবশালী নেতা ও তখনকার একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের অনুরোধে ডিবি তাঁকে ছেড়ে দেয়।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, বনানীর যে ফ্ল্যাটে পুলিশ কর্মকর্তা খুন হন, সেটি রবিউলের কোনো অফিস ছিল না। তিনি কখনোই ব্যবসায়ী ছিলেন না। রবিউল মূলত মানুষের সঙ্গে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। রবিউল ও ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক মিলে যে চক্রটি গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে উঠতি মডেল ছাড়াও ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা। মামুন হত্যা মামলায় যে আটজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের মধ্যে আতিকসহ তিনজন ছিলেন একটি বাহিনীর

অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। মামলার অভিযোগপত্রে তাদের নাম থাকলেও তারা কোন বাহিনীতে ছিলেন, সেটা উল্লেখ করা হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে র‍্যাবের অভিযানে নায়িকা পরীমনি, মডেল পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় একজন প্রযোজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই প্রযোজকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার সখ্য ছিল। প্রযোজকের সুপারিশে ওই নেতা রবিউলকে ছেড়ে দিতে তখনকার একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধেই ডিবি রবিউলকে ছেড়ে দেয়।

জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তখন ডিবিতে ছিলাম না।’ এ বিষয়ে জানতে তৎকালীন ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

তখন ডিবির প্রধান ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ খুনের ঘটনাটি আমি মনে করতে পারছি। কিন্তু খুনের ঘটনায় কাউকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’

সম্প্রতি দুবাইয়ে রবিউলের আরাভ জুয়েলার্স নামের সোনার দোকানটি উদ্বোধন করতে যান দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের কয়েকজন তারকা। একজন খুনের মামলার আসামির দোকান উদ্বোধনে তারকাদের যাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রবিউলের সোনার ব্যবসার সঙ্গে দেশের কারও বিনিয়োগ রয়েছে কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখছে ডিবি। পাশাপাশি কোন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন সময় দেশে এসেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা।

রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে কয়েক দিন সময় লাগবে।