ইসলামে পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন

প্রকাশকালঃ ০৭ আগu ২০২৩ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ ২০৯ বার পঠিত
ইসলামে পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন

সলাম শান্তির ধর্ম। পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধানগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি যে শুধু ইসলামী নাম রাখা, মাঝে মাঝে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, কোরবানির ঈদের সময় কোরবানি দেওয়াই ইসলাম, এ ধারণা ঠিক নয়।

ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, তাই জীবনের পরতে পরতে ইসলাম আছে। ইসলামকে শুধু কয়েকটি ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। জীবনকে পরিপূর্ণ ইসলামের নির্দেশনায় পরিচালনা করার নামই ইসলাম। এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না।

নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৮) নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো নিজেকে পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবিষ্ট করার জন্য আবশ্যক।


আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ : নিজেকে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবিষ্ট করতে হলে অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাঁর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে।

আমাদের নবীজি (সা.)-পূর্ববর্তী সব নবীকে মহান আল্লাহ আত্মসমর্পণের আদেশ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে, এমতাবস্থায় আমাকে তাদের ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে, আল্লাহ বাদ দিয়ে যাদের তোমরা আহ্বান করো। আর আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৬৬)

ইবরাহিম (আ.)-কে নির্দেশ করা হয়েছে— যখন তাঁর রব তাঁকে বললেন, ‘তুমি আত্মসমর্পণ করো (ইসলাম গ্রহণ করো)।’ তিনি বলেন, ‘আমি সমস্ত সৃষ্টির রবের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩১)  


বিশুদ্ধ আকিদা : বিশুদ্ধ আকিদা পোষণ করা, মহান আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, একমাত্র তাঁরই উপাসনা করা, কুফর, বিদআত থেকে নিজেকে বিরত রাখা পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবিষ্ট হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো (সত্য) উপাস্য নেই; সুতরাং আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো। (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৪)

একনিষ্ঠভাবে ইবাদত : একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর ইবাদত করা ইসলাম পালনের অন্তর্ভুক্ত। ইবাদত বহু ধরনের হতে পারে, যেমন—ইসলাম নামাজের নির্দেশ দেয়, পবিত্র কোরআনে নামাজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ কায়েম করা মুমিনদের জন্য ফরজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)


ইসলাম জাকাত-সদকার নির্দেশ দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা নাও। এর মাধ্যমে তাদেরকে তুমি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৩)


ইসলাম রোজার নির্দেশ দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

ইসলাম হজ করার নির্দেশ দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফজর।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৯৭)


হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আমর ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, ইবন আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরস্পর পালন (হজ সমাপনের পর ওমরাহ এবং ওমরাহর পর হজ) করবে, কেননা তা (এ দুটি) অভাব-অনটন ও পাপকে দূর করে দেয়, যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৩০)

উত্তম চরিত্র : ইসলাম উত্তম চরিত্র গঠনের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়, পবিত্র কোরআনে নবীজি (সা.)-কে উদ্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত।’ (সুরা : কলম, আয়াত : ৪)

হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যাবতীয় উত্তম চরিত্র ও উত্তম কার্যাবলি পরিপূর্ণ করার জন্যই আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন। (শরহুস সুন্নাহ, মুসনাদে আহমদ)


এ জন্য ইসলাম মুমিনকে অন্যদের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দেয়। যেমন—সুরা বাকারায় বলা হয়েছে—‘আর মানুষকে উত্তম কথা বলো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৮৩)

ইসলাম মানুষকে লজ্জাশীলতা ও পর্দার বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৩০)

এক কথায় কেউ যদি পরিপূর্ণ ইসলাম পালন করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই নবীজি (সা.)-এর আদর্শ ও চরিত্র অনুসরণ করতে হবে।


লেনদেন ও চুক্তিতে স্বচ্ছ থাকা : ইসলাম হালাল উপার্জন, বেচাকেনায় আমানত রক্ষা, ওয়াদা পালন, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা ত্যাগের নির্দেশ দেয়। পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, সৎ আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ করার তাগিদ দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা ভাই ভাই।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎ কাজ করতে ও সংযমী হতে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো। তবে পাপ ও শক্রতার ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য কোরো না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২)

এক কথায় বলতে গেলে, পরিপূর্ণ ইসলাম পালন করতে হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সh নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। এর বাইরে কোনো মত, কোনো পথের অনুসরণ করা যাবে না। ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে নিজেকে সর্বদা দূরে রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের জীবন সঞ্চারক বস্তুর দিকে আহ্বান করেন। আর জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের অন্তরালে থাকেন, পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় করো, যা তোমাদের মধ্যকার শুধুমাত্র জালিম ও পাপিষ্ঠদেরই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবে না। তোমরা জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে খুব কঠোর।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৪-২৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবিষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন।