জাতিসংঘের প্রতিবেদন: আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও বিক্ষোভের বিস্তার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫০ অপরাহ্ণ   |   ৯১ বার পঠিত
জাতিসংঘের প্রতিবেদন: আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও বিক্ষোভের বিস্তার

জাতিসংঘের অধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শুরুর দিকে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক ঘটনাবলীর ফলে তৎকালীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। বিশেষ করে আন্দোলনের শেষ দিনগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর পদক্ষেপ বিক্ষোভকে পুনরায় উস্কে দেয়।
 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রশমিত করতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আসতে দেরি হয়। আদালতের আদেশের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ আন্দোলনকারীদের নেতাদের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হয়।
 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সরকার হাইকোর্টের কোটা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দেয়, যা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। পরের দিন শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে বলেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরেন, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
 

ওএইচসিএইচআর প্রকাশিত তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে 'সম্পূর্ণ শাটডাউন' কর্মসূচির ডাক দেয়, যেখানে হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীও হরতালের সমর্থনে তাদের অনুসারীদের আহ্বান জানায়।
 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করলেও, ছাত্ররা আলোচনায় যেতে রাজি ছিল না। কারণ তারা আগের সহিংসতার জন্য সরকারের সদিচ্ছার প্রতি সন্দিহান ছিল।
 

১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করলে সাধারণ জনগণও বিক্ষোভে যোগ দেয়। নিরাপত্তা বাহিনী তখন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা প্রাণহানির কারণ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করে, যার ফলে উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের কিছু অংশ পুলিশের পাশাপাশি সরকারি অবকাঠামোতে হামলা চালায়। সরকার ১৮ জুলাই বিজিবিকে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেয় এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।
 

১৯ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গুলি চালায়, যা সহিংসতা প্রশমিত করতে ব্যর্থ হয়। এরপর ২০ ও ২১ জুলাই সেনা অভিযানের মাধ্যমে সড়ক অবরোধ মুক্ত করতে সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেয়, তবে আন্দোলনকারীরা তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবিও উত্থাপন করে।
 

২৬ জুলাই বিএনপি সরকার পতনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলনকারীদের দমন করতে গণগ্রেপ্তার শুরু করে, যেখানে ছয়জন বিশিষ্ট ছাত্রনেতাকেও আটক করা হয়। ২৮ জুলাই তাদের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে তারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। এতে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
 

ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, ২৫ জুলাই শেখ হাসিনা ভাঙচুর হওয়া অবকাঠামো পরিদর্শন করেন এবং পুলিশের গুলিতে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। ২৮ জুলাই তিনি নিহত ছাত্রদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানান এবং বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতার দায় চাপান। ৩০ জুলাই সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
 

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের শুরুতে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের একক দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। ৩ আগস্ট সেনাবাহিনী আন্দোলন দমনে অস্বীকৃতি জানালে সরকার সংকটে পড়ে। ৫ আগস্ট লাখো আন্দোলনকারী ঢাকায় সমবেত হলে, পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গুলি চালায়।
 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী প্রধান শেখ হাসিনাকে জানিয়ে দেন যে, তারা আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে পারবে না। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন।