ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে চরাঞ্চল এবং শহরে শীতজনিত অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়রিয়ার এ প্রকোপের জন্য রোটা ভাইরাসকে দায়ী করছেন।
কারণ, শীতের সময়ই রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। সংক্রামক এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই দিনের মধ্যে লক্ষণ শুরু হয়। প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে আছে, জ্বর এবং বমি। তিন থেকে সাত দিন পর শুরু হয় ডায়রিয়া। সংক্রমণের ফলে পেটে ব্যথাও হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণগুলো কম প্রকাশ পায়।
গতকাল মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, ১২ শয্যার বিপরীতে ডায়রিয়া বিভাগে মোট ৭০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৬৪ জন শিশু। গত দু’দিনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে অন্তত ৩৫ জন। চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগীদের প্রায় সবাই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত বলা যায়। কারণ ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির ঠান্ডায় রোটা ভাইরাস খুব সক্রিয় থাকে। জুন-জুলাইতে এমন হলে অন্য কিছু বলা যেত।
জানা গেছে, ২৫০ শয্যার এ হাসপালের শিশু বিভাগে ৪৮ শয্যার বিপরীতে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়াসহ চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮১ জন। নতুন করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১২ জন। অন্যান্য বিভাগে ৪৩৮ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। বহির্বিভাগে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৩১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন; যার অধিকাংশ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। রোগী বেশি হওয়ায় এক শয্যায় দু’জনকেও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। কোনো কোনো রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দায়।
রোটা ভাইরাস থেকে বাঁচতে টিকা বিদ্যমান। এ টিকা ১৫ থেকে ৩৪ শতাংশ গুরুতর ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে এবং গুরুতর ডায়রিয়ার কারণে শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৭ থেকে ৯৬ শতাংশ কমায়। সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই) রোটা ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত নয়। বেসরকারিভাবে বাজারভেদে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় এ টিকা কিনতে পাওয়া যায়। ফলে অনেক অভিভাবক টিকা কিনতে বিপাকে পড়েছেন।
ডায়রিয়া বিভাগে ভর্তি এক শিশুর অভিভাবক সানজিদা বেগম বলেন, ‘আমার বাচ্চাটা গত তিন দিন থেকে ভর্তি। ডাক্তার বললো, রোটা ভাইরাসের জন্য ডায়রিয়া হয়েছে। বাইরে থেকে ৩ হাজার টাকায় টিকা কিনতে হয়েছে।’
চিকিৎসকরা বলছেন, রোটা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়; যা শিশুর ঠান্ডার সময়ে ডায়রিয়া হওয়ার মূল কারণ। এ অবস্থায় শিশুর খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, বাইরের খাবার না খাওয়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গরম পোশাক পরিধান করানো এবং খেজুরের রস না পানের পরামর্শ দেন।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আল আমিন মাসুদ বলেন, সরকারিভাবে রোটা ভাইরাসের টিকাদান ব্যবস্থা চালু করলে নিম্ন আয়ের অভিভাবকরা উপকৃত হবেন। এ টিকা শিশুরা আক্রান্ত হওয়ার পর ২টি ডোজ দিতে হবে।