মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে অজয় বাঙ্গাকে মনোনীত করেছিলেন, তখন নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষাও ফুরিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ গতকাল বুধবার সংস্থার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতীয়-আমেরিকান অজয় বাঙ্গাকে নির্বাচিত করেছে।
আগামী ২ জুন থেকে তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে। তিনি ডেভিড ম্যালপাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁর মেয়াদ ছিল আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক যে পদ্ধতিতে বৃহত্তর ঋণ প্রদান কর্মসূচি পরিচালনা করে, তা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন ডেভিড ম্যালপাস। এ নিয়ে কয়েক মাস ধরে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেনের চাপে ছিলেন তিনি।
অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসে জেনেট ইয়েলেনকে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানান ডেভিড ম্যালপাস।
সাধারণত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে আমেরিকা। কারণ, সেখানে তাদের ভোটাধিকার অনেক বেশি। তারা যাকে মনোনয়ন দেয়, তাকে টপকে অন্য কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে, সেই সুযোগ নেই। এর কারণ হলো, বিশ্বব্যাংকের বৃহত্তম অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে কাজ করেন। অন্যদিকে আইএমএফের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কে এই অজয় বাঙ্গা
৬৩ বছর বয়সী অজয় বাঙ্গার জন্ম ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনেতে। ১৯৯৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০০৭ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ইকুইটি প্রতিষ্ঠান জেনারেল আটলান্টিকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
দিল্লিতে সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ করেন তিনি। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ‘নেসলে ইন্ডিয়া’র হাত ধরে। এরপর কাজ করেন সিটি ব্যাংকেও।
আর্থিক খাত ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অজয় বাঙ্গা ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সম্মানীয় চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৬ সালে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন অজয় বাঙ্গা। এটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন পেয়েও নিষ্ক্রিয় থাকেননি অজয় বাঙ্গা। রয়টার্স জানিয়েছে, মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি ৯৬টি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিন সপ্তাহের ভ্রমণে আটটি দেশে সফর করেছেন। সব মিলিয়ে ৩৯ হাজার ৫৪৬ মাইল ভ্রমণ করেছেন তিনি। এ সময় তিনি রাজনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এখন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইবিআরডি) নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ (আইডিএ) আরও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্ষদে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অজয় বাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে কো-চেয়ার হিসেবে পার্টনারশিপ ফর সেন্ট্রাল আমেরিকায় কাজ করেছেন। এই অলাভজনক সংস্থাটি উত্তর-মধ্য আমেরিকায় বিনিয়োগ পরিবেশ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করে। আমেরিকান ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনেরও ইমেরিটাস চেয়ারম্যান অজয় বাঙ্গা। এ ছাড়া তিনি ন্যাশনাল কমিটি অন ইউএস-চায়না রিলেশনসের সাবেক সদস্য।
* ২০১২ সালে ফরেন পলিসি অ্যাসোসিয়েশন মেডেল পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৯ সালে দ্য বিজনেস কাউন্সিল ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিংস গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২ সালে সিঙ্গাপুর সরকারের ডিস্টিংগুইশড ফ্রেন্ডস অব সিঙ্গাপুর পাবলিক সার্ভিস স্টার পুরস্কার পেয়েছেন অজয় বাঙ্গা।
অজয় বাঙ্গাকে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পর তাঁর সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইতিহাসের এই ক্রান্তিকালে বিশ্বব্যাংককে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য মানুষ অজয় বাঙ্গা। সরকারি-বেসরকারি সম্পদ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বাঙ্গার প্রভূত অভিজ্ঞতা আছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ এ সময়ের অন্যান্য গুরুতর সমস্যা নিরসনে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।’
অজয় বাঙ্গার মনোনয়নের পর এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পদে অজয় বাঙ্গা সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।
সূত্র: বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস