শিরক সবচেয়ে বড় পাপ

প্রকাশকালঃ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪১ অপরাহ্ণ ২২১ বার পঠিত
শিরক সবচেয়ে বড় পাপ

সলাম ধর্মে, শির্‌ক (شرك) বলতে অংশীদার সাব্যস্ত করা, একাধিক স্রষ্টা বা উপাস্যে বিশ্বাস করাকে বুঝায় অর্থাৎ শির্‌ক হল আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে সাব্যস্ত করা বা তার উপাসনা করা। ইসলামি পরিভাষায় মহান আল্লাহর সাথে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে শরিক করা কিংবা তাঁর সমতুল্য মনে করাকে শিরক বলা হয়। এটি তাওহিদের বিপরীত। ইসলামে শির্‌ক হল একটি অমার্জনীয় অপরাধ যদি না মৃত্যু নিকটবর্তী হবার পূর্বে আল্লাহ্‌র নিকট এই অপরাধের জন্যে ক্ষমা চেয়ে না নেয়া হয়। ইসলামের নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুসারে, আল্লাহ্ তায়ালার কাছে ক্ষমা না চাইলেও মৃত্যুর পর নিজের বিচার অনুসারে তার ইবাদতকারীদের যে কোন ভুল ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শির্‌কের অপরাধী দুনিয়াতে ক্ষমা না চাইলে কখনোই ক্ষমা করবেন না।

 

আল্লাহ্ তায়ালা শির্কের বিপরীত তাওহিদের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এভাবে,

বললঃ “তিনি আল্লাহ, এক অ অদ্বিতীয়।‘’(সুরা আল-ইখলাস, আয়াত ১)।

যদি সেথায় (আসমান ও জমিনে) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ থাকত তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।‘’(সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ২২)

 

শিরকের প্রকারভেদ

শির্‌কও প্রধানত চার ধরনের হতে পারে। যথা-

১. আল্লাহ তায়ালার সত্তা অ অস্তিত্বে শিরক করা। যেমন- ঈসা (আ.)-কে আল্লাহর পুত্র মনে করা।

২. আল্লাহ তায়ালার গুনাবলিতে শিরক করা। যেমন- আল্লাহ তায়লার পাশাপাশি অন্য কাউকে সৃষ্টিকর্তা বা রিযিকদাতা মনে করা।

৩. সৃষ্টি জগতের পরিচালনায় কাউকে আল্লাহর অংশীদার বানানো। যেমন- ফেরেশতাদের জগৎ পরিচালনাকারী হিসেবে মনে করা।

৪. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে শরিক করা। যেমন- আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সিজদাহ করা, কারও নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি।

 

তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের অবস্থা

মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও প্রতিপালকত্বে বিশ্বাস করত। একইসাথে তারা বিভিন্ন মূর্তি, পাথর, গাছ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, জিন, মৃতব্যক্তি ইত্যাদি বস্তু ও জীবের ইবাদত বা উপাসনা করত। আল্লাহ্ ছাড়াও ঐসব দেবদেবীকে ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাকা, বিপদে তাদের কাছে সাহায্য, আশ্রয়, উদ্ধার প্রার্থনা করা এবং তাদের নামে যবাই ও মানত করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শির্‌ক করত। কুরআনে বলা হয়েছে,

"আর তুমি যদি জিজ্ঞাসা কর, আসমানসমূহ ও যমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা (মুশরিকরা) অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন।"[কুরআন ৪৩:৯]

 

কুরআনে আরও বলা হয়েছে,

"তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (উপাসনায়) শির্‌ক করা অবস্থায়।"[কুরআন ১২:১০৬]

 

মক্কার মুশরিকরা দাবি করত যে, দেবদেবীকে ডাকলে বা উপাসনা করলে এরা আল্লাহ্‌র নৈকট্য মিলিয়ে দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে,

"জেনে রেখ, আল্লাহ্‌র জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের উপাসনা করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী করে দেবে।..."[কুরআন ৩৯:৩]

 

তারা আরও দাবি করত যে, দেবদেবীরা আল্লাহ্‌র দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

"আর তারা আল্লাহ্ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্কে আসমানসমূহ ও যমিনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরিক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।"[কুরআন ১০:১৮]

 

কুরআনে এগুলোকে মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন বলা হয়েছে,

"অতঃপর তারা আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহ্‌র পরিবর্তে যাদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা কেন তাদেরকে সাহায্য করল না? বরং তারা তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর এটা তাদের মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন।"[কুরআন ৪৬:২৮]