আরব লিগের সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক দশকেরও বেশি সময় আগে আরব জোট থেকে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে দেয়। এরপর আবারও দেশটিকে জোটে ফিরিয়ে আনতে একমত হয়েছে তারা। ইরাকের সরকারি গণমাধ্যম এই সংবাদ দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আজ রোববার (৭ মে) মিশরের রাজধানী কায়রোতে আরব লিগের সদরদপ্তরে সিরিয়াকে সদস্য হিসেবে ফিরিয়ে আনতে ভোট দেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
আগামী ১৯ মে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আরব লিগের সম্মেলনের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়াতে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়নের নির্দেশ দেওয়ার পর দেশটির সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয় আরব লিগ। বাশারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ যার ফলে প্রাণ হারায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ আর বাস্তুচ্যুত হয় দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি অধিবাসী।
জর্ডানের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, সম্প্রতি বাশার আল আসাদ শক্তভাবে সিরিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আরব দেশগুলো ‘আরব নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক পথে’ সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেয়।
গত সপ্তাহে জর্ডানের উদ্যোগে আরব লিগে সিরিয়াকে ফেরাতে মিশর, ইরাক, সৌদি আরব ও সিরিয়ার শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকদের বৈঠকের পর আজ কায়রোতে এই সিদ্ধান্ত নেয় আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইত আজ বলেন, “বাশার আল আসাদ আরব লিগের আগামী সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন, যদি তিনি ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।’ কায়রোতে সংবাদ সম্মেলনে আবুল ঘেইত বলেন, ‘আজ সন্ধ্যা থেকেই সিরিয়া আরব লিগের পূর্ণ সদস্য আর আগামীকাল সকাল থেকেই তারা যেকোনো একটি আসনে বসার অধিকার রাখে।’
আবুল ঘেইত আরও বলেন, ‘আয়োজক দেশ সৌদি আরব যখন আমন্ত্রণ জানাবে তখন তিনি (বাশার আল আসাদ) ইচ্ছা করলেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।’
এদিকে, আরব লিগে সিরিয়াকে ফিরিয়ে নিতে ভোটের আয়োজন করার পর দেশটি আরব দেশগুলোর প্রতি ‘পারস্পরিক সম্মান’ প্রদর্শনের ডাক দিয়েছে। এক বিবৃতিতে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে একটি কার্যকর পন্থা অন্বেষণের আহ্বান জানিয়ে বলে, আরব দেশগুলো যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তা থেকে উত্তরণে যৌথ কর্মতৎপরতা ও আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
দামেস্কের সাথে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের বিষয়টি গতি লাভ করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এবং সম্প্রতি সৌদি আরব ও ইরানের সম্পর্ক পুনস্থাপনে চীনের মধ্যস্ততায় আলোচনা শুরুর মাধ্যমে।
তবে, এতোকিছুর পরেও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, সিরিয়া সরকারের প্রতি তাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। সিরিয়াকে ‘দুর্বৃত্ত’ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা মার্কিন প্রশাসন আরব দেশগুলো প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন সিরিয়াকে ফেরানোর বিনিময়ে বাশার আল আসাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করে।