বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তার হাজিরার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এসব প্রতিক্রিয়া জানান ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, অভিযুক্তরা আইন অনুযায়ী ‘ডিভিশন’ (বিশেষ ব্যবস্থা) পেতে পারেন; তবে ‘সাব জেল’ নামে কোনো ভিন্নবিধ আচরণ বা বৈষম্য করা যাবে না।
ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে বক্তব্য রাখেন গুমের ভুক্তভোগী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী, ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান প্রমুখ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, অভিযুক্ত সেনারা র্যাবের সঙ্গে জড়িত হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন; তাদের সংখ্যাও সামগ্রিকভাবে এক শতাংশের বেশি নয়। ফলে পুরো সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করে মেলা সমালোচনা অনুচিত—তবু যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “সব অপরাধীকে বিচার পেতে হবে — তবু আমি চাই তারা যেন সুবিচার পায়; তাদের বক্তব্য আদালত শুনুক এবং সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।”
মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান বলেন, ‘সেনানিবাসের ভেতরে ঘোষিত সাবজেলের বিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত অভিযুক্তরা কোনোভাবে কর্মরত সেনাসদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কি না, তা দেখা জরুরি। যদি গ্রেপ্তার অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে থাকা অবস্থায় বিচারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়, সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেল কোড সঠিকভাবে মানা না হলে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের জীবন নতুন করে ঝুঁকির সম্মুখীন হবে।’ আরমান আশা প্রকাশ করেন—জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনী আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না; এই বিচারের মধ্য দিয়েই তা নিশ্চিত হবে বলে তার বিশ্বাস।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের সঙ্গে বৈষম্য করা ঠিক হবে না; তাদেরও অন্য আসামিদের মতোই জেলবন্দি রাখা উচিত। প্রয়োজনে ডিভিশন দেওয়া যেতে পারে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি যারা বিদেশে আছে, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরে নিয়ে এসে হাজির করা হোক—এটাই আমার দাবি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, ‘আজকের এই দিন আমরা দেখতে পারছি—এটি দেশের মানুষের চাপের ফল। এখনো অনেক অপরাধী মুক্ত আছে; আমাদের মামলাগুলো সবার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের প্রিজনভ্যানে এনে—এসি রুমে রেখে বা অফিসার্স মেসে বিশেষ সুবিধা দিয়ে না—যেভাবে আমাদেরকে রাখা হয়েছে, সেভাবেই তাদেরও রাখা হোক; কারণ তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।’
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা জোর দিয়ে অনুরোধ করেছেন যে বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, সমান ও বিন্দুমাত্র বৈষম্যহীন হবে—এবং দেশের বাইরে থাকা অভিযুক্তদের ধরিয়ে এনে ন্যায্য বিচারের মুখে হাজির করা হবে।