সতর্ক রেমিট্যান্স নিয়ে ব্যাংক

প্রকাশকালঃ ৩০ জুলাই ২০২৪ ০২:০৬ অপরাহ্ণ ৮০ বার পঠিত
সতর্ক রেমিট্যান্স নিয়ে ব্যাংক

হঠাৎ করেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে গত ৯ মাসের ধারাবাহিক অর্জন জুলাইয়ে ব্যাহত হতে পারে। কারণ গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের আশপাশে বা তার চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কিন্তু চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে ১৫৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।


কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় জুলাই মাসে দুই বিলিয়ন ডলার না-ও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন ব্যাংকাররা। এমন পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংককে ডলার বেশি দরে কেনার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর মৌখিকভাবে এক ডজন ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। যারা রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ পায়, এমন ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে একটি ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু করেছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়, আগে যা ১১০ টাকা ছিল। এতে ডলারের দর এক লাফে সাত টাকা বাড়ানো হয়। নতুন এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু করার পর ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা অফার করতে সক্ষম হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক প্রতি ডলার ১১৮.৫০ থেকে ১১৮.৭০ টাকায় অফার করছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তাঁর ব্যাংক এরই মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ডলারের দর বাড়িয়েছে। কারণ এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেটবিভ্রাটের কারণে জুলাইয়ের রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রত্যাশিত স্তরে থাকবে না। এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ আগামী দিনে ডলারের দর আরো বাড়তে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ডলারের দাম বাড়ানোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।


দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন প্রবাসীরা। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার শঙ্কা দেখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসীরা দু-এক মাস আয় পাঠাতে না পারেন। তবে যাঁরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁরা হুন্ডিতে পাঠাবেন না। আগামী এক সপ্তাহ বোঝা যাবে রেমিট্যান্স কমবে কি না।

 

এদিকে গত শনিবার বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় চলমান গুজব ও অপপ্রচারে বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যত সম্পদ, আমাদের সরকারের যত অবকাঠামো, এগুলো কিন্তু আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকা, দেশের কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর করের টাকায় তৈরি।’ তিনি আরো জানান, যাঁরা রেমিট্যান্স  পাঠানোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন, তাঁরা যদি টানা ছয় মাস রেমিট্যান্স না পাঠান বা বৈধ পথে না পাঠান, তবে আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষতি হবে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ছয় দিনে দেশে প্রবাস আয় এসেছে সাত কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাস আয় এসেছিল সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাসের প্রথম ভাগে এক দিনে যে পরিমাণ প্রবাস আয় এসেছিল, সর্বশেষ গত ছয় দিনে এসেছে তার সমপরিমাণ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি কেউ বিদেশ থেকে প্রবাস আয় পাঠিয়ে থাকেন, ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য; কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাস আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তাতে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

 

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বিদেশে ক্যাম্পেইনসহ যা যা করা দরকার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার কারণে ওই সময় রেমিট্যান্স আসার গতি কমেছে। তবে যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, তাঁরা অপপ্রচারে কান দেবেন না বলে আমরা আশাবাদী।’

 

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্স পাঠানো হয় প্রধানত পরিবারের প্রয়োজনে। ফলে সংঘবদ্ধভাবে অনেক দিনের জন্য মানুষ রেমিট্যান্স পাঠাবে না, কিংবা হুন্ডি করবে তা বাস্তবসম্মত নয়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে জাতিসংঘ যদি তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তখন বিদেশি ঋণ ও অনুদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও সরে দাঁড়াতে পারে।’