দুদফা বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি কৃষক 

প্রকাশকালঃ ০৮ আগu ২০২৪ ০৯:২৩ অপরাহ্ণ ৪৯১ বার পঠিত
দুদফা বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি কৃষক 

ঢাকা প্রেস

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

পরপর দুই দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলায় কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দীর্ঘ সময় বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমির আমন বীজতলা, পটল, শসা, মরিচ, কাউনসহ বিভিন্ন ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। বন্যার পানি নেমে গেলেও বীজতলা নষ্ট হওয়ায় অনেকে নতুন করে চাষাবাদ করতে পারছেন না।
 

 

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন কৃষক। মৌসুম শেষের আগে বাকি জমিতেও রোপণ সম্ভব হবে। নদ-নদী অববাহিকার কৃষকরা উঁচু এলাকা থেকে আমন চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে পারবেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণ করে উঁচু অঞ্চল থেকে আমনের চারা সংগ্রহ করছেন। তবে বেশির ভাগ কৃষক তা করতে পারছেন না। এর মধ্যে আবার রয়েছে বর্ষার শেষ সময়ে বন্যার আশঙ্কা। শেষ সময়ে বন্যা হলে আবারো অন্যান্য ফসলের মতো নষ্ট হয়ে যাবে নিচু এলাকার আমন খেত। এ কারণে চিন্তায় পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০ হাজার কৃষক।

 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার চার শতাধিক চর রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে নদ-নদীর অববাহিকায় অসংখ্য নিচু অঞ্চল। ২ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহব্যাপী ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয় চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় একেবারেই নষ্ট হয়ে যায় শসা, পটল, বেগুন, মরিচ, চিনা বাদাম, কাউন, আমন বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। এসব ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস মিললেও বিভিন্ন কারণে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শেষ পর্যন্ত সহায়তা না পেলে সংকটে পড়ার কথা জানান স্থানীয় কয়েকজন কৃষক।

 

সরজমিনে দেখা গেছে, জেলার উঁচু অঞ্চলের কৃষক বন্যার পর পরই তাদের জমিতে আমন চারা রোপণ শুরু করেন। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকার জমি অনাবাদিই পড়ে রয়েছে।

 

এসব অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ বেশি দামে চারা কিনে রোপণের প্রস্তুতি নিলেও অনেকে রয়েছেন শেষ সময়ের বন্যার অপেক্ষায়। আবার বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক চিন্তায় পড়েছেন রোপণের খরচ নিয়ে।

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজারের কৃষক মিন্টু মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে বড় বন্যা হয়নি। কিন্তু এবার পরপর দুই দফা বন্যা হয়েছে। তাতে পটল, বেগুন, শসা, মরিচ ও অন্যান্য ফসলের সঙ্গে আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে আর বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এখন বাইরে থেকে বেশি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে। কিন্তু বন্যার মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। তাছাড়া হাতে টাকাও নেই। সব মিলিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

 

সদর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক মমিন বলেন, ‘আমার জমি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিচু অঞ্চলে হওয়ায় বন্যার পানিতে বীজতলাসহ সব নষ্ট হয়ে গেছে। হাতে টাকা-পয়সাও নেই। হালচাষ, সার খরচ ও চারা কেনার মতো টাকাও নেই। ঋণ করে আমন চারা রোপণ করা ছাড়া উপায়ও নেই। আর কয়েকদিন অপেক্ষার পর যেভাবেই হোক জমিতে চারা রোপণের চিন্তা করছি।’

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘এ ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই চরাঞ্চল। প্রায় সব কৃষকই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু আমন চাষে সরকারি সহায়তা দিলে হবে না। এখানে বন্যা-পরবর্তী সময়ে বীজসহ সার কীটনাশক দিয়েও সহায়তা করা প্রয়োজন। না হলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’

 

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন কৃষক। বাকি জমিতেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চারা রোপণ করা সম্ভব হবে। যেসব অঞ্চলে বন্যার পানিতে বীজতলা নষ্ট হয়েছে, সেসব অঞ্চলে কৃষকদের উঁচু এলাকা থেকে আমন চারা সংগ্রহ করে রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজার কৃষকের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকারি প্রণোদনা পাওয়া গেলে কৃষককে তা দেয়া হবে।’