হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা মৃত্যু

প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৪ ১২:১২ অপরাহ্ণ ৭৫৭ বার পঠিত
হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা মৃত্যু

হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় প্রাণ হারালেন ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা নাদিয়া নূর (৩০)। বুধবার (৫ জুন) ভোরে রাজধানীর পল্লবীতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নাদিয়া নূরের মৃত্যুতে হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসায় অবহেলাকে দায়ী করেছে পরিবার।

 

নাদিয়ার স্বামী আনিসুর রহমান পলাশ বলেন, গত শুক্রবার রাতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শনিবার ভোরে আমি নাদিয়াকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ভর্তি করি। ভর্তির পরে শনিবার সারাদিনে আমার স্ত্রীর ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং রাতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে দেখা যায় পেটে ১৬ সপ্তাহের সন্তানও সুস্থ আছে। কিন্তু পরের দিনেই নাদিয়ার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সে ছটফট করছিলো। কিন্তু রাত ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত ডেকে আমি কোনো ডাক্তারকে আনতে পারিনি।

 

রাত ২টার কিছু পরে একজন ডাক্তার আসেন। ততক্ষণে ওর শারিরীক পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে শুরু করে। জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এ সময় আমি সিদ্ধান্ত নেই রোগীকে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবো। এ বিষয়টি আইসিইউ এর দায়িত্বরতদের জানালে তারা পোশাক বদলের কথা বলে এই রোগীকে দুই ঘণ্টা কোনো ধরণের স্যালাইন, অক্সিজেন ছাড়াই ফেলে রাখে সেখানে।

 

রোগী চিৎকার করে ভেতর থেকে বলছে আমার খারাপ লাগছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আইসিইউতে ওই রোগীর বেডের পর্দা টেনে দেয় এবং আমাকেও ঢুকতে দেয়নি। দুই ঘণ্টা পরে আইসিইউ থেকে বের করে দিলে দেখি নাদিয়া ঠিকমতো সাড়া দিচ্ছে না। হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে ডাক্তারসহ আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স টিম প্রস্তুত থাকলেও অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অবস্থা না থাকায় আবারো এই আইসিইউতে নেওয়া হয়।

 

তিনি আরো বলেন, পেটের ভিতরে বাচ্চাটাও মারা যায়। এরপর একে একে অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গ অকার্যকর হতে শুরু করে। গত মঙ্গলবার লাইফসাপোর্টে চলে যায়। বুধবার ভোরে নাদিয়া মারা যায়। এই রোগীকে ধাপে ধাপে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা। রোগীর প্রাণ চলে যায় তবু ডেকে চিকিৎসকদের নিয়ে আসা যায় না। কিছু মানুষের অবহেলায় আমার চার বছরের মেয়েটিও আজ মা হারা হলো।

 

অনাগত সন্তানের মুখও দেখতে পারলাম না। আমরা এর বিচার চাই। এভাবে হাসপাতালের গাফিলতিতে আর যেন কেউ প্রিয়জন না হারায়।’ এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, আইসিইউ এর রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন, অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর সাপোর্টে আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে স্থানান্তর করার কথা।

 

সেখানে যদি এভাবে  দুই ঘণ্টা কোন ধরণের সাপোর্ট ছাড়া ফেলে রাখা হলে তার প্রাণহানির সর্বোচ্চ ঝুঁকি তৈরি হয়। হাসপাতালের আইসিইউ’র সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মিলেছে অভিযোগের সত্যতা। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পলস্নবীর নিজ বাসভবনে নাদিয়া নূরের প্রথম জানাজা হয়। এরপর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

 

ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের লাইসেন্স নিয়েছেন ডা. ছিবগাতুর রহমান। চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।' কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে ডিউটি অ্যাডমিন এবং ইনফরমেশন ডেস্কে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।