কাউসার সরকার (বিশেষ প্রতিনিধি-কুমিল্লা)::-
বিয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে, সুসজ্জিত গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন অমিত কুমার সরকার। গন্তব্য ছিল রূপগঞ্জের কনের বাড়ি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু—সবাই ছিলেন আনন্দে বিভোর। নতুন জীবনের সূচনা হবে—এই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এক রাতেই যেন চিরতরে রূপ নেয় ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অমিত (৩৫) ছিলেন দুই ভাইয়ের বড়জন। তিন বছর আগে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল ছোট ভাই আশিকের। সেই শোক ভুলে বাবা-মা, বিশেষ করে মা রাধা রাণী সরকার ছেলের বিয়ে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনেছিলেন।
তিন মাস আগে অমিতের বিয়ে ঠিক হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভিংরাব গ্রামে। ৩১ জুলাই, বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের দিন। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে বরযাত্রী নিয়ে রওনা হন তিনি। কিন্তু রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে রাজধানীর ল্যাবএইড। কিন্তু সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে রাত ২টার দিকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন অমিত।
ওদিকে, রূপগঞ্জের বিয়েবাড়িতে চলছিল উৎসবের প্রস্তুতি। সবাই অপেক্ষায়—বর আসবেন, বিয়ে হবে। কিন্তু ফোনে যখন আসে মৃত্যুসংবাদ, সে উৎসব মুহূর্তেই পরিণত হয় শোকে।
শুক্রবার ভোরে নববধূ নয়, বরফ শীতল এক অ্যাম্বুলেন্সে মোড়ানো অবস্থায় নিজ গ্রামে ফেরেন অমিত। বরের সাজেই শেষবারের মতো মায়ের সামনে আসেন, কপালে তখনও লেগে ছিল চন্দনের ফোঁটা। আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কান্নায়। মা রাধা রাণী বারবার মূর্ছা যান—‘আমার দুই ছেলেই চলে গেল... আমি আর কারে ধরে বাঁচব?’
তিন বছরের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। অমিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক মাধ্যমে নেমে আসে শোকের ছায়া।
বরযাত্রী দলের সদস্য গুরুপদ সরকার বলেন, “আমরা সামনে ছিলাম। হঠাৎ ফোন আসে—অমিত অসুস্থ। তখনই বুঝেছিলাম, আর এই যাত্রা শেষ হবে না বিয়ের সাজে...।