বাই রোডে নেপাল ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?

প্রকাশকালঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:২০ অপরাহ্ণ ১৬৭ বার পঠিত
বাই রোডে নেপাল ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?

হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত সৌন্দর্যে ঘেরা একটি দেশ, নেপাল। নেপাল তার মনোরম দৃশ্যাবলী, প্রাচীন মন্দির এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে উপমহাদেশের অন্যতম পছন্দের একটি টুরিস্ট স্পট।

 

প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নেপালয়ে যায় নেপাল ভ্রমণ করতে, না হয় ট্রেকিং করতে । নেপালে পাহাড়-পর্বত  এবং ট্রেকিং ছাড়াও পর্যটকেরা আসেন এখানকার দর্শনীয় স্থান মন্দির এবং বুদ্ধস্তুপ গুলোর মতো দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে। প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক নেপাল ভ্রমন করতে যায়, আমার মনে হয়েছে সঠিক ইনফরমেশন এর অভাবে ৩০-৪০% পর্যটকদের নেপালের আসল সৌন্দর্যই দেখা হয়ে উঠেনা। নেপাল এমন একটি দেশ যেখানে আপনি একসাথে অনেক বিনদোন পাবেন। চলুন জেনে নেই কিভাবে নেপালে যাবেন? কোথায় থাকবেন? 

বাংলাদেশ থেকে নেপালে কোন প্রি-ভিসা নিয়ে যেতে হয়না, সার্ক ভুক্ত দেশ থেকে নেপালে অন এরাইভাল ( অর্থাৎ তাৎক্ষণিক ) ভিসা দেয়া হয় সুতারং ভিসা নিয়ে কোন চিন্তা নয়। তবে কেউ যদি আগে-ভাগে ভিসা নিয়ে যেতে চান তবে বাংলাদেশ থেকে নেপালের এমব্যাসিতে একটি ফর্ম পূরণ করে পাসপোর্ট জমা দিয়ে পরের দিন ভিসা সহ নেয়া যায়।

 

 

বাংলাদেশ থেকে নেপালে ভিসা প্রাপ্তির উপায় 

ট্যুরিস্ট ভিসা: বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ ভ্রমণকারী নেপালে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আগে থেকেই আবেদন করতে পারেন। নির্ধারিত দিনে নেপালে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে নেপালী দূতাবাস বা কনস্যুলেট থেকে ভিসা পেতে পারেন। প্রক্রিয়াকরণের সময় দেওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ আগে ভিসার জন্য আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে ভিসাটি হবে স্টিকার ভিসা।

অন এরাইভাল ভিসা: নেপাল বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অন এরাইভালে ভিসা প্রদান করে। আপনি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা নির্দিষ্ট স্থল সীমান্ত ক্রসিং-এ পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন ডেস্কে অথবা বাংলাদেশে বসেই অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে নেপালে ভিসার আবেদন করতে পারেন। তবে অনলাইনে পোর্টালে শুধু অন এরাইভাল ভিসার আবেদন করতে পারবেন, যা শুধু বাই এয়ারে গেলেই প্রযোজ্য। আপনার কাছে বৈধ ৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট, নগদ ভিসা ফি এবং ভিসার আবেদনের জন্য পাসপোর্ট আকারের ছবি সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে অন এরাইভালেই ভিসা প্রদান করা হয়

 

বাংলাদেশ থেকে নেপালে আপনার জার্নি শুরু করার আগে, কয়েকটি প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি:

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: আপনার নেপাল টুরটির আগে নিশ্চিত করুন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ আছে কিনা। তবে একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, নেপালে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ মিনিমাম ৬ মাস বা তার বেশি হতে হবে। অনেকসময় আমরা নির্ধারিত তারিখে টুর প্ল্যান করার আগে পাসপোর্টের মেয়াদের কথা খেয়ালে রাখি না।

মানি ট্রান্সফার এবং বাজেট নির্ধারণ: বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার আগে অবশ্যই টাকার বিনিময় এক্সচেঞ্জ করে নিবেন। থাকা, খাওয়া, যাতায়াত এবং নেপালে আপনার সমস্ত এক্টিভিটিসের একটি বাজেট আগে থেকেই নির্ধারণ করে যাবেন। তাহলে নেপালের আপনার থাকাকালীন সময়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

 


বাংলাদেশ থেকে নেপাল কিভাবে যাবেন?

সড়ক পথেঃ রাত ৭:৩০ হানিফ পরিবহনের বাস আছে ঢাকা থেকে বুড়িমারী, বাসে উঠার আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন অথবা বাসে উঠার সময় কিনে নিন। সকালে বুড়িমারী পৌঁছাতে ১০টা বেজে যাবে। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নিবেন। প্রায় ১ ঘন্টার মত সময় লাগবে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে। ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করে প্রবেশ করবেন চ্যাংড়াবান্ধায়। ভারতীয় ইমিগ্রেশনেও প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। সেখানে কাজ শেষে যেতে হবে রাণীগঞ্জ বর্ডারে।

এরপর টাকা ভাংগিয়ে রানিগঞ্জের জন্য গাড়ি রিজার্ভ করবেন। গ্রুপ টুর হলে ভালো হয়। গ্রুপে যত মানুষ বেশি হবে, পার হেড ভাড়াও কম পড়বে। গাড়িতে ৫-৬ জন যাওয়া যায়। প্রায় ৩ ঘন্টা পর রানিগঞ্জ (১১০ কি.মি.) বর্ডারে পৌছাবেন। অথবা চ্যাংড়াবান্ধা থেকে একটি ভ্যানে করে শিলিগুড়ি-কুচবিহার হাইওয়ে রোডে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি পৌঁছতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে আরেকটি বাসে করে যেতে হবে পানিটাংকি। এরপর পানি টাংকি থেকে মাত্র ৩ মিনিট পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে পারেন রানীগঞ্জ ইমিগ্রেশন অফিস। এরপর সেখান থেকে যেতে হবে নেপালের কাঁকড়ভিটায়। শিলিগুড়ি থেকেও বাসে সরাসরি চলে যেতে পারেন কাঁকড়ভিটা। 

কাকারভিটা ইমিগ্রেশনে কাজ শেষ করে কাঠমুন্ডু যাওয়ার বাসের টিকিট কাটবেন। আপনাদের কাকারভিটা ইমিগ্রেশনে এ বিকেল হয়ে যাবে, তাই দুপুরের খাবার খেয়েই কাঠমুন্ডু (৭০০ কি. মি.) যাওয়ার বাসের টিকিট তাড়াতাড়ি কাটবেন। সন্ধা ৭ টায় কাঠমুন্ডুর উদ্দেশ্যে শেষ বাস ছাড়ে। পথে বেশ কয়েকবার যাত্রা বিরতি দেয়, পথে নাস্তা করে নিতে পারেন। রাতের খাবার কিনে নিবেন গাড়িতে উঠার আগে। অথবা রাতে যাত্রা বিরতি দিলে নেমে রাতের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। জার্নিটা একটু লম্বা এবং কষ্টের। প্রায় ১৬ ঘন্টার জার্নি।

 

 

কোথায় থাকবেন?

থাকতে হলে থামেলের চেয়ে উপযুক্ত স্থান আর দ্বিতীয়টি নেই। কারণ পুরো থামেলের গলি ঘুপচিতে অসংখ্য হোটেল/ ব্যাকপ্যাকার হোস্টেল রয়েছে। ভালো মানের ডাবল রুমের বাজেট হোটেল এখানে পাওয়া সম্ভব। সিঙ্গেল রুমের হোটেল ও এখানে আছে। বাজেট বেশি হলে ডিলাক্স রুমের খাবারসহ অনেক ভালো হোটেল পাওয়া যায়। তবে থামেলের হোটেলগুলো আগে থেকে বুকিং না দিয়ে বরং কয়েকটি হোটেল ঘুরে যাচাই-বাছাই করলে সস্তায় ভালো হোটেল পাওয়া সম্ভব।


কোথায় খাবেন?

নেপালের লোকাল খাবার হিসেবে তারা ভাতের থালিকেই প্রাধান্য দেয়। তাই কাঠমান্ডুর যেখানেই যাওয়া হোক না কেন ভাত না খেয়ে থাকা অসম্ভব। ভাতের সঙ্গে ডাল, মাছ, মুরগি, সালাদ, রায়তা, শাক ও পাঁপড় থালিতে থাকে। নেপাল শীতপ্রধান দেশ বলে সেখানে মোমোর প্রচলন আছে। থামেল ও কাঠমান্ডুর অন্যান্য জায়গায় অসংখ্য মোমোর দোকান আছে। এ ছাড়াও আছে নানা স্বাদের নানা রংয়ের চা ও কফি। ফুলের পাপড়ি থেকেও চা তৈরি করেন তারা। 

নেপালে ঘুরতে গেলে থাকা-খাওয়া ও বেড়ানোর খরচ মিলিয়ে কমের মধ্যে হয়ে যাবে। জনপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকার মধ্যে খুব ভালোভাবে এসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারেন।