ঢাকা প্রেস
মঈনুদ্দীন শাহীন (ষ্টাফ রিপোর্টার) কক্সবাজার:-
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বাসিন্দাদের জন্য খাবার পানি সরবরাহের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দ্বীপের পরিবেশ দূষণ কমে যাবে এবং প্রবালসহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সব বর্জ্য সংগ্রহে পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা (বেকোটেগ) চালু করা হবে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্ল্যান (প্লাজমা রিয়েক্টর) তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অনুদানে এবং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বাস্তবায়িত হবে। বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে দ্বীপের বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনমতো খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন দুই টন মনুষ্য বর্জ্য এবং দুই টন কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। পর্যটন মৌসুমে দৈনিক প্রায় দুই হাজার পর্যটক চার হাজারের বেশি প্লাস্টিক বোতলসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করেন, যা দ্বীপের পরিবেশ এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বীপে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হবে এবং মল স্লাজ ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন সিস্টেম গড়ে তোলা হবে। তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান—টার্ণ বিল্ডার্স, গ্রীণ ডট লিমিটেড, এবং ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড—প্রকল্পের বাস্তবায়নে কাজ করবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় রেইন ওয়াটার, গ্রাউন্ড ওয়াটার ও সারফেস ওয়াটার পরিশোধনের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহ করা হবে। এই পানি গ্রহণের জন্য বিশেষ কার্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম ফি পরিশোধ করতে হবে।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, একটি ল্যাবরেটরি তৈরি করা হবে পানির মান যাচাইয়ের জন্য। এছাড়া পরিবেশবান্ধব অপারেশন বিল্ডিং এবং আন্তর্জাতিক মানের দুটি পাবলিক টয়লেটও নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যেখানে মানব বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য একত্রে ব্যবস্থাপনা করা হবে। বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয়বারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ। কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে একই ধরনের প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর সফলতা পাওয়া গেছে।
এই প্রকল্প দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টার্ণ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদ আল হাসান জানিয়েছেন, কিছু পরিবহন সমস্যার সমাধান করে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম সরকারের পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পের প্রশংসা করে দ্রুত বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেছেন।