চালু করতে যাচ্ছে ভারত চীন সীমান্তে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

প্রকাশকালঃ ১৪ জুন ২০২৩ ০৫:৩৫ অপরাহ্ণ ২০০ বার পঠিত
চালু করতে যাচ্ছে ভারত চীন সীমান্তে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প

চীন সীমান্তের কাছে নতুন একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদন শুরু করতে চলেছে ভারত কর্তৃপক্ষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুই রাজ্য আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের মাঝে সুবানসিরি লোয়ার ড্যাম প্রকল্পটি অবস্থিত। স্থানটি চীনের সীমান্তের কাছাকাছি।

ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কোম্পানি (এনএইচপিসি) লিমিটেড। তারা জানিয়েছে, আগামী জুলাই থেকে সেখানে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে।

এনএইচপিসির পরিচালক (অর্থ) রাজেন্দ্র প্রসাদ গয়াল জানান, জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি আগামী ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটির আটটি ইউনিটই চালু হবে বলে জানান তিনি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত তাদের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বেশ পরিবর্তন আনছে। সেই প্রক্রিয়ায় সুবানসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জলবিদ্যুৎকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। কারণ, নবায়নযোগ্য দুই উৎস—সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অনেক সময় উৎপাদন ব্যাহত হতে বা কমে যেতে পারে। তখন ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জলবিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হতে পারে। এর ফলে বিদ্যুতের চাহিদার ওঠা–নামার সঙ্গেও দ্রুত সমন্বয় করা যায় জলবিদ্যুতের মাধ্যমে।


দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৩ সালে শুরু করেছিল ভারত সরকার। তবে এই বাঁধের কারণে পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন পরিবেশবাদীরা। এটি নিয়ে বিক্ষোভ ও মামলার কারণে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়।


মামলার কারণে আট বছর স্থগিত ছিল নির্মাণকাজ। এরপর ২০১৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল আবার কাজ শুরুর অনুমতি দেয়। অবশেষে প্রায় ২০ বছর পর নির্মাণকাজ শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হতে যাচ্ছে। তবে এই সময়ে প্রকল্পের ব্যয় কয়েক দফায় বৃদ্ধি পেয়ে ২১ হাজার ২৫০ কোটি রুপি হয়েছে, যা প্রাথমিক বরাদ্দের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা ভারতে সাধারণ চিত্র। কারণ, বাঁধের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন পরিবেশবাদীরা। তবে দেশটির সরকারের দাবি, বাঁধের বিরোধিতার কারণে ভারতে ১ লাখ ৪৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কাজে লাগানো গেছে।


রাজেন্দ্র প্রসাদ গয়াল বলেন, একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করার আগে আমাদেরকে বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রায় ৪০টি অনুমোদন পেতে হয়। সুতরাং সব ধরনের যাচাই-বাছাই এই সময়েই করা উচিত। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর যেকোনো ধরনের বাধা প্রকল্পের বড় ক্ষতির কারণ হয়।

জলবিদ্যুৎকে উৎসাহিত করতে ভারত বড় বাঁধকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির মর্যাদা দিয়েছে। পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিবর্তে জলবিদ্যুৎ ক্রয়কে অগ্রাধিকার দিতে প্রাদেশিক বিদ্যুৎ বিতরণকারীদের বাধ্য করছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ভারতের বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, চীন ও পাকিস্তানের উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোয় স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করছে এসব জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।

এদিকে সুবানসিরির পরে দিবাং নামের ২ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের নতুন আরেকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ভারত। নির্মাণ শেষ হলে এটিই হবে ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।