রূপালি জগতের সোনালী স্বপ্ন: অস্কার

প্রকাশকালঃ ১২ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ ১৯০ বার পঠিত
রূপালি জগতের সোনালী স্বপ্ন: অস্কার

একাডেমি পুরস্কার বা অস্কার; যা নিয়ে এতো উত্তেজনা

 

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, কোন কাজের জন্য দু'টি জিনিস প্রয়োজন বেশি। এদের একটি উদ্বুদ্ধকরণ এবং অপরটি প্রেষণা। উদ্বুদ্ধকরণ ব্যক্তির মধ্যে কর্মমুখী প্রেষণার সঞ্চার করে এবং এ প্রেষণা ব্যক্তিকে প্ররোচিত বা প্রলুদ্ধ করে। যদিও পুরস্কার ঘিরে থাকে নানা উদ্দেশ্য। একাডেমি পুরস্কার বা অস্কার (Oscar) হলো একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস এন্ড সায়েন্সেস কর্তৃক প্রদত্ত একটি বার্ষিক পুরস্কার, যেখানে রূপালি জগতের অসাধারণ পেশাদার যেমন পরিচালক, অভিনেতা, এবং লেখকদের কাজকে সম্মানে ভূষিত করা হয়।

 

বর্তমান বিশ্বে চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এবং আলোচিত পুরস্কার হচ্ছে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার। কিন্তু আজকে যে অস্কার নিয়ে এতো মাতামাতি, এই অস্কার পুরস্কার কিন্তু শুরুতে এতোটা আলোচিত ছিলো না। বেশ ছোট পরিসরেই ১৯২৯ সালের ১৬ মে এক রকম ঘরোয়া ভাবে যাত্রা শুরু হয় অস্কার পুরস্কারের। ধীরে ধীরে এই আবহ থেকে বের হয়ে এসে এই পুরস্কার এখন বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।

 

১৯২৮ সালে এ পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং প্রতি বছর একবার করে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত হয়। তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও সাফল্য প্রতিফলন করেছে, তা নয়, বরং তা বিশ্বের অনেক দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর যে প্রভাব ফেলেছে, তা উপেক্ষা করা যায় না। এ পুরস্কারের ট্রফি হলো একজন সোনালী রং-এর পুরুষের। এ ট্রফির দৈহিক উচ্চতা ৩৪.২৯ সেন্টিমিটার। ওজন ৩.৮৬ কেজি। তা কিন্তু খাঁটি সোনা দিয়ে নয় শুধু সোনার আবরণ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। একটি ট্রফি তৈরি করতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা এবং এমন একটি সোনা গিলটি ট্রফি তৈরি করতে প্রায় ৫ শ' মার্কিন ডলার লাগে। দারুণ একটি বিষয় হলো যে তা সব হাতের তৈরি, কোনো মেশিন ব্যবহার করা হয় না।

 

অস্কারে কোনো পুরস্কর পাওয়া তো খুব গর্বের এবং আনন্দের ব্যাপার। পুরস্কার পাওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার যখন কেউ শুধুমাত্র মনোনয়ন পায় সেটাই একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীর জন্য অনেক গৌরবের। তাহলে পুরস্কার পেলে কী রকম আনন্দের বিষয় হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই অনেকেই পুরস্কার গ্রহণের পর তা রীতিমত উদযাপন করে থাকে। তবে অস্কারের ইতিহাসে এমন একজন আছেন, যাকে পুরস্কার পাওয়ার পর পরই আনন্দ উদযাপন করার পরিবর্তে কারাগারে যেতে হয়েছে।

 

১৯৮২ সালের অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ইজ্বিগনিও রিবিস্কি নামে একজন পরিচালক শ্রেষ্ঠ সর্ট ফিল্ম পুরস্কার পায়। অনুষ্ঠান চলাকালে তিনি থিয়েটারের বাইরে একটি সিগারেট খেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইলে, অপরিচিত নিরাপত্তা রক্ষী কর্মী তাকে থিয়েটারে সিগারেট না খাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু রিবিস্কি বললেন- আমি এই মাত্র অস্কার পুরস্কার পেয়েছি, আর এখনই ভিতরে যাবো। তবুও ওই নিরাপত্তা কর্মী তাকে সিগারেট খাওয়ার অনুমতি দেয় না। এরপর সেই অস্কারজয়ী পরিচালক রেগে গিয়ে কর্মীকে মেরে বসেন, আর এ করণে তাকে কারাগারে যেতে হয়।


সোনালী পুরুষটিকে ছিনিয়ে নিতে আকাঙ্খা

 

অস্কার পুরস্কার নির্বাচনের নিয়ম অনেক কঠোর। চলচ্চিত্র শিল্প একাডেমীর এই পুরস্কার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রাথমিক মনোনয়ন পেতে হবে। আর এই মনোনয়ন পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে চমৎকার ছবি এবং চমৎকার অভিনয়ের দক্ষতা। তবে ১৯৬৮ সালে এ নিয়মকে ভেঙে দিয়েছেন মার্কিন অভিনেত্রী বারবারা স্ট্রইসান্ড। যখন তিনি অস্কারের সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছেন, তখন তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ফানি গার্ল’–এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যদিও অনেকেই তার মনোনয়নের বিরোধিতা করেছে, তবুও তার চমৎকার অভিনয়ের কারণে তিনিই অবশেষে সে বছরের অস্কার পুরস্কার পেয়েছেন। এটা অস্কারের ইতিহাসে একবারই ঘটেছে।

 

প্রতিবছরই এখন অস্কার পুরস্কারের আয়োজন করা হয়। বিশ্বের অগণিত মানুষ কৌতুহলি হয়ে উঠে এই পুরস্কার নিয়ে। আয়োজনে কোন কোন সিনেমা নমিনেশন পেলো, কোনটি জিতে নিলো সেরা চলচ্চিত্র পুরস্কার, কে হলেন সেরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী-এ সব নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা।