জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছিলেন, যদি বাহরাইনের মাল এসে যায় তাহলে আমি তোমাকে এত এত দেব। কিন্তু নবী (সা.)-এর মৃত্যু পর্যন্ত বাহরাইনের মাল এসে পৌঁছায়নি। পরে যখন বাহরাইনের মাল পৌঁছল, আবু বকর (রা.)-এর আদেশে ঘোষণা করা হলো, নবী (সা.)-এর কাছে যার অনুকূলে কোনো প্রতিশ্রুতি বা ঋণ রয়েছে সে যেন আমার কাছে আসে। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, নবী (সা.) আমাকে এত এত দেবেন বলেছিলেন।
তখন আবু বকর (রা.) আমাকে এক অঞ্জলি ভরে দিলেন, আমি তা গণনা করলাম এতে পাঁচ শ ছিল। তারপর তিনি বললেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে যাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৯৬)
১. ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক : উল্লিখিত হাদিসে মৃত ব্যক্তির ঋণ আদায় ও অঙ্গীকার পূরণ করার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। শরিয়তের দৃষ্টিতে দাফন কাফনের পর মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ওয়ারিশদের ঋণ পরিশোধ করা আবশ্যক।
ওয়ারিশরা ঋণ আদায় করা বা ঋণদাতা ক্ষমা করা ছাড়া মৃত ব্যক্তি কখনো দায়মুক্ত হবে না। মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে ঋণ আদায় করার পর ওয়ারিশরা অবশিষ্ট সম্পত্তির মালিক হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এর সবই (তারা পাবে) সে যা অসিয়ত করে তা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১)
২. যে কেউ পরিশোধ করতে পারবে : যদি মৃত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মতো পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে না যায় এবং অন্য কেউ তা পরিশোধ করে দেয়, তবে তা আদায় হয়ে যাবে এবং আদায়কারী ব্যক্তি উপযুক্ত প্রতিদান পেয়ে যাবে।
সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন নবী (সা.)-এর কাছে জানাজা নামাজের জন্য এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলো। তখন নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি কোনো ঋণ আছে? সাহাবিরা বললেন, না। তখন তিনি তার জানাজার সালাত আদায় করলেন। তারপর আরেকটি জানাজা উপস্থিত করা হলো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি কোনো ঋণ আছে? সাহাবিরা বললেন, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, তোমাদের সাথির নামাজে জানাজা তোমরাই আদায় করে নাও। আবু কাতাদা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ঋণের দায়দায়িত্ব আমার ওপর। তখন তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৯৫)
৩. আল্লাহ যার ঋণ শোধ করবেন : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সম্পদ অপচয় ও অপব্যয় না করে এবং ইচ্ছা থাকার পরও ঋণ শোধ করে না যেতে পারে অথবা ঋণ পরিশোধের মতো সম্পদ রেখে না যেতে না পারে, তবে পরকালে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার সামনে ডেকে আনবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, হে আদম সন্তান, তুমি এই ঋণ কেন গ্রহণ করেছিলে এবং কোথায় ব্যয় করেছিলে যে মানুষের হক নষ্ট করলে? উত্তরে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি জানেন আমি তা গ্রহণ করেছিলাম, তবে তা আমি খাইনি, পানও করিনি, পরিধানও করিনি, তা নষ্টও করিনি। আমি তা গ্রহণ করার পর পুড়ে গেছে, বা চুরি হয়েছে বা ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। আজ তোমার পক্ষ থেকে ঋণ আদায়ে আমিই অধিক হকদার। অতঃপর আল্লাহ কিছু জিনিস (ফেরেশতাদের কাছে) চাইবেন এবং তা দাঁড়িপাল্লায় রাখবেন। এতে ব্যক্তির পাপের পাল্লার ওপর নেকের পাল্লা ভারী হবে এবং সে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মাজমাউল জাওয়াইদ : ৪/১৩৬)