মাম্পস রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়

প্রকাশকালঃ ২৯ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ ৬৭৫ বার পঠিত
মাম্পস রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়

মাম্পস মূলত শিশুব্যাধি। পেরামিক্সো গ্রুপের এক ভাইরাস অসুখটি তৈরি করে। এর ৮৫ শতাংশ ঘটে থাকে শিশুর ১৫ বছর বয়সের মধ্যে। শীতের শেষ ও বসন্তকালে, শহরতলির ঘিঞ্জি পরিবেশে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

 শিশু যেভাবে আক্রান্ত হয়

মাম্পসের জীবাণু মাম্পস আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে, কাশি-হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে কিংবা লালা-প্রস্রাব দূষিত ব্যবহৃত জিনিস দ্রব্যাদির সাহায্যে শিশুর দেহে প্রবেশ করে। এ জীবাণু রোগী অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে অসুখ মিলিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ছড়াতে সক্ষম। তা ছাড়া মাম্পস আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীর মধ্যে রোগের স্পষ্ট লক্ষণ থাকে না। সাধারণভাবে মাম্পস ভাইরাস দেহে প্রবেশের পর শ্বাসতন্ত্রের টিস্যুতে সাময়িকভাবে বংশ বৃদ্ধি ঘটায়। পরে তা রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করে। বাহুল্য, এর প্রধান টার্গেট পেরাটিড ও অন্যান্য লালাগ্রন্থি।

লক্ষণ

সচরাচর মাম্পস জীবাণু দেহে ঢোকার ১৪ থেকে ২৪ দিনের মাথায় অসুখের চিহ্ন দেখা যায়। প্রথমদিকে জ্বর, মাথা ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা ইত্যাদি থাকে। সাধারণভাবে জ্বরের মাত্রা তেমন বেশি থাকে না। এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মূল লক্ষণ প্রকাশ পায়-অর্থাৎ এক দিক বা দুই দিকের পেরোটিড-লালাগ্রন্থি ফুলে যায়। তাতে খুব ব্যথা থাকে। কানের সামনের ডান ও চোয়ালের ওপরের দিকের অংশটি থাকে ফোলা, যা কখনো কখনো কানের লতিকে পেছনের দিকে ঠেলে রাখে। একই সঙ্গে দুই দিকের গ্ল্যান্ড ফোলে না। একটি শুরুর দুই থেকে তিন দিনের মাথায় ফোলে। অন্যটি শুরু থেকেই ফুলে থাকে। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সাধারণত ফোলার উপশম ঘটে। তবে কখনো কখনো বেশিদিন লাগতে পারে।

সাধারণভাবে তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই বেশির ভাগ মাম্পস রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে অনেক মারাত্মক জটিলতাও কখনো কখনো হতে পারে। যেমন— মেনিনগো এনকেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ), হার্ট, টেসটিস, কিডনি, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদির প্রদাহ। শিশুর কানে না শোনার অন্যতম প্রধান কারণও মাম্পস-পরবর্তী জটিলতা।

চিকিৎসা

* সুনির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই।

* সাধারণ ব্যবস্থাপনাই আসল। স্বাভাবিক খাবার বজায় রাখা, খাবারের পুষ্টিমান অটুট রেখে খাওয়ানো।

* জ্বরের জন্য শিশুর প্রতি কেজি ওজন হিসেবে প্যারাসিটামল খেতে দেওয়া।

* শরীরে পানির চাহিদা পূরণ

* কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হবে।

মাম্পস প্রতিরোধর উপায়

* মাম্পস প্রতিরোধের শক্তি শিশু বয়সের প্রথম চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত বজায় থাকে, যা সে মায়ের কাছ থেকে লাভ করে।

* মাম্পস আক্রান্ত শিশু প্রায় সারা জীবনের জন্য ইমিউনিটি লাভ করে।

* এমএমআর ভ্যাকসিন মাম্পসের জন্য অত্যন্ত কার্যকর প্রতিরোধক টিকা।