প্রকাশকালঃ
২৬ জুলাই ২০২৩ ০১:৫৬ অপরাহ্ণ ১৭৩ বার পঠিত
বিশ্ব শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে উচ্চশিক্ষার পুনর্বিন্যাসের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যা। একে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে বিশ্বে কর্মজগতের যে চাহিদা তা বিচেনায় নিতে হবে।
গত সোমবার আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কখনই দেশের সমস্ত জনসংখ্যাকে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান করতে পারব না। তাহলে আমাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সেই বিশ্ব কর্মবাজারও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সেই বিশ্ব কর্মজগতের চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রত্যেকটি জায়গায় কী ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে সেই ম্যাপিং করে তার ভিত্তিতে এগুতে হবে।
তাহলে যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের জন্য কর্ম জগতের ব্যবস্থা করতে পারব। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে এসে গেছি, আমাদের ২০৩১-২০৩২ সাল পর্যন্তই আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডেবিডেন্ট অর্জনের সময় রয়েছে। আমাদের যে তরুণ জনগোষ্ঠী আছে, এই সময়টাতেই সর্বাধিক যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে তাহলে আমারা সেই ডিভিডেন্ট আমরা পাব। অর্থাৎ বিনিয়োগ হলে আমরা লভ্যাংশ পাব।
দীপু মনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছি—পরিবর্তন যখন করতে হবে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, ব্লান্ডেড মেথডে ভিন্নভিন্ন মেয়াদের শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে। যার পক্ষে সম্ভব সে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে করবে, যার সম্ভব কাজের জায়গা থেকে করবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের কাজের জগতটাই পাল্টে দেবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আজ প্রাথমিকে যে পড়ছে তার কর্মজগতে প্রবেশের সময় বর্তমান কাজের বেশিরভাগই থাকবে না। শিক্ষার্থীদের সেইভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা অভিযোজনে দক্ষ হয়। যেকোনো পরিবেশে নিজেকে থাপ খাইয়ে নিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তনের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে।
এখনও প্রায় সে অবস্থা এসে গেছে, এখন আমাদের সেই দক্ষতা শিখতে হবে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি প্রবণতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ বলতে পারেন আপনি একদিকে বলছেন সবার অনার্স-মাস্টার্স করার প্রয়োজন নাই। আরেকদিকে বলছেন- জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কিন্ত সাংঘির্ষিক নয়, আমাদের এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোর শিক্ষার্থীর দিকে তাকালে বোঝা যাবে আমাদের যে ধারণক্ষমতা তার চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে অনেক সমস্যা এবং সেই সমস্যাগুলো যাতে না থাকে সেজন্যই জেলায় জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করবার উদ্যোগ। এমন নয় যে তার নিজের জেলাতেই পড়তে হবে, যেখানে তার পছন্দ সেখানেই পড়বেন। কিন্তু কোথাও যেন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা না হয়। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবাইকে ভেবে দেখে এই প্রবণতাকে রোধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ইউজিসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে তাদের বছরের মাঝপথে আরো বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। যারা ব্যয় করতে পারেন না তাদের সমস্যা, যারা ব্যয় করতে পারেন তাদের জন্য সমস্যা নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার গবেষণাকে উৎসাহিত করবার জন্য বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা করে করে শিখবে। অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাববেন না পরীক্ষা নেই তো শিক্ষর্থীরা কী শিখবে? মূল্যায়ন আছে, পরীক্ষাও আছে। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি। সে জন্য অভিভাবকদের বলছি— সন্তানদের আর জিজ্ঞেস করবেন না কত নম্বর পেলে। দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন— তুমি আজ নতুন কী শিখেছো? শেখাটা জরুরি, নম্বর তার চেয়ে কম জরুরি। আর শিক্ষার্থীকে নম্বরের জন্য চাপ দিতে দিতে তাদের মনে হীনমন্যতার জন্ম দেবেন না দয়া করে।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী, আহসানিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।