গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য ইসরায়েলি প্রস্তাব উন্মোচন বাইডেনের
প্রকাশকালঃ
০১ জুন ২০২৪ ০৪:১৬ অপরাহ্ণ ৮৩৭ বার পঠিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য হামাসকে নতুন ইসরায়েলি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কথা ঘোষণাকালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় আট মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি টানার আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে।’
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। হামাস নির্দিষ্টসংখ্যক জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে কয়েক’ শ বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। এ ছাড়া গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফেরার সুযোগ পাবে।
সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মি ও সেনাসহ বাকিদের মুক্তি দেবে হামাস। গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেওয়া হবে এ সময়।
এরপর যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে। যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। আলোচনা সফল হলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা শুরু হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে গাজার জন্য বাস্তবায়ন শুরু করা হবে বড় ধরনের ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’। মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের দেহাবশেষও ফিরিয়ে আনা হবে।
চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে যুদ্ধ স্থগিত এবং গাজার জন্য একটি বড় পুনর্গঠন পরিকল্পনার দিকে নিয়ে যাবে। পুনর্গঠন পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে। ইসরায়েলের দেওয়া এই প্রস্তাবকে গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) ‘ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা’ করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বক্তৃতায় বাইডেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি জনবহুল এলাকা থেকে আইডিএফ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি সত্যিই একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্ত। হামাস বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। তারা সত্যি যুদ্ধবিরতি চায় কি না তার প্রমাণ এই চুক্তিটি মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাবে।’
তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক গাজায় নিয়ে যাওয়াসহ বিপর্যস্ত অঞ্চলে আরো মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেবে এই যুদ্ধবিরতি।’ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ক্যামেরন হামাসকে প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এক্স-এ বলেছেন, ‘এই চুক্তিটি অবশ্যই মেনে নিতে হবে, যাতে আমরা লড়াই বন্ধ হওয়া দেখতে পারি।’
লর্ড ক্যামেরন আরো বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তি দিয়ে আসছি যে যুদ্ধ বন্ধ হলে স্থায়ী শান্তি ফিরে আসবে এবং এ ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আসুন এই মুহূর্তটিকে কাজে লাগাই এবং এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাই।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এক্স-এর একটি পোস্টে এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব গাজায় চরম দুর্ভোগ ও ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করেছে, এখন থেমে যাওয়ার সময়।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং যুদ্ধবিরতি চাই। সব জিম্মির মুক্তি, অবাধ মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে শেষ পর্যন্ত একটি টেকসই শান্তির এই সুযোগ কাজে লাগাতে সব পক্ষকে আহ্বান করছি।’
তবে বাইডেন পরে স্বীকার করেছেন, কিছু ইসরায়েলি এবং ইসরায়েলি সরকারের কিছু কর্মকর্তা সম্ভবত এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলি নেতাদের এই চুক্তির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। যতই রাজনৈতিক চাপ আসুক না কেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি ইসরায়েলি জনগণকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তটি হারাতে পারি না।’