সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সরকারকে দুর্বল করবে: মির্জা ফখরুল

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ মার্চ ২০২৫ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ   |   ৯৬ বার পঠিত
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সরকারকে দুর্বল করবে: মির্জা ফখরুল

ঢাকা প্রেস নিউজ
 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মূল লক্ষ্য আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে অবমূল্যায়ন ও ক্ষমতাহীন করা, যা শেষ পর্যন্ত একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যাবে।
 

শনিবার সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
 

মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার কমিশন সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) বিভিন্ন নতুন কমিশনের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব কমিশনের এখতিয়ার ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মাধ্যমে প্রশাসনকে অকার্যকর করে তোলার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে। এর ফলে দেশব্যবস্থার ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।
 

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মালিকানা, যা নির্বাচিত সংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে রাজনীতিবিদদের গুরুত্ব কমিয়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় আনার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী।
 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংস্কার প্রচেষ্টা চলবে।
 

তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, যা জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
 

সংস্কারের প্রকৃত উদ্দেশ্য জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, সম্পদের নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের নিশ্চয়তা বিধান করা। তাই এই সংস্কারগুলো যেন নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
 

মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন—উভয় প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি করা যেতে পারে, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। তাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
 

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কিছু সুপারিশ প্রশ্নবিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে। কমিশনের সদস্যদের বক্তব্য ও নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক দলের অবস্থান একরকম হওয়া সন্দেহজনক। এ ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানোর প্রচেষ্টা অনভিপ্রেত।
 

বিএনপির ৩১ দফা সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ-উত্তর রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের ভিত্তি ইতোমধ্যেই বিএনপি তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই আমরা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের যে রূপরেখা দিয়েছিলাম, তা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
 

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির চালিকাশক্তি। এই ঐক্যকে অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে, যেন কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা না পায়।
 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, তিনি ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় হতাহতের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান।