ইসলাম শিক্ষককে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতারা ও আসমান-জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষা দেয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৫)
ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘শিক্ষককে সম্মান করা আবশ্যক। তা হলো তাকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া, তাঁর প্রতি বিনয়ী থাকা এবং তাঁর অনুগ্রহের বদলা দেওয়া। (গিজাউল আলবাব, পৃষ্ঠা ৩৩৮)
শিক্ষক পিতৃতুল্য
পারস্পরিক সম্মান ও স্নেহের সম্পর্ক এবং দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতার বিচারে পিতা শিক্ষাতুল্য; বরং তাঁরও অধিক। শাফেয়ি মাজহাবের কোনো কোনো ইমাম বলেন, ‘শিক্ষকের অধিকার পিতার অধিকারের চেয়ে দৃঢ়তর। কেননা তিনি চিরন্তন জীবন (জান্নাতের সুখ-শান্তি) লাভের মাধ্যম। আর বাবা ক্ষণস্থায়ী জীবন লাভের মাধ্যম।
এ জন্য শিক্ষককে সম্মান করা আবশ্যক এবং তাকে অসম্মান করা নিষিদ্ধ।’ (গিজাউল আলবাব, পৃষ্ঠা ৩৩৮)
শিক্ষক পিতৃতুল্য কথার ব্যাখ্যা
শিক্ষক পিতার মতো কথার ব্যাখ্যা হলো শিক্ষক পিতার মতোই কল্যাণকামী। পিতা যেমন সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন এবং তাদের অকল্যাণ থেকে রক্ষা করতে চান, শিক্ষকও অনুরূপ শিক্ষার্থীর প্রতি মমতাময়ী। মানবজাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মহানবী (সা.)।
তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক এভাবে তুলে ধরেছেন—‘আমি তো তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য। আমি তোমাদের শিক্ষা দিই। তোমাদের মধ্যে কেউ যখন পেশাব-পায়খানার স্থানে যাবে, তখন সে যেন কিবলার দিকে ফিরে অথবা কিবলাকে পেছনে রেখে না বসে। আর ডান হাতে যেন পবিত্রতা অর্জন না করে।’ বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সা.) তিনটি পাথর (ঢেলা) ব্যবহার করতে হুকুম করতেন এবং গোবর ও হাড়কে ঢেলা হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪০)
শিক্ষক পিতার মতো, পিতা নন
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষক পিতাতুল্য, পিতা নন। বিশেষত নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি অন্য ১০ জন পুরুষের মতোই। তাই নারীদের উচিত পুরুষ শিক্ষকের ব্যাপারে সতর্ক থাকা। বিশেষত যেসব ক্ষেত্রে বিপদ ও স্খলনের ভয় থাকে। সমাজের অসংখ্য ঘটনা সাক্ষ্য দেয় যে শিক্ষক পিতৃতুল্য হলেও পিতা নন। তাঁরা মানবীয় প্রবৃত্তি, লালসা ও চাহিদার ঊর্ধ্বে নন। এ ছাড়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যতই নৈতিক হোক না কেন শরিয়তের নির্দেশ হলো, ‘মুমিনদের বোলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বোলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)
শিক্ষকের সঙ্গেও পর্দা ফরজ
ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারীর জন্য গাইরে মাহরাম পুরুষের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ। শিক্ষক মাহরাম (যার সঙ্গে বিয়ে বৈধ নয়) না হলে তার সঙ্গে পর্দা করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের (মুখের) ওপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে (তারা সতীসাধ্বী মুমিন নারী)। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৯)
আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদের নির্দেশ দেন যে তারা যখন নিজ ঘর থেকে কোনো প্রয়োজনে বের হয়, তখন তাদের মুখমণ্ডল যেন মাথার ওপর থেকে বড় চাদর দিয়ে ঢেকে নেয় এবং এক চোখ খোলা রাখে।’ (তাফসিরে ইবন কাসির : ৬/৪৪২)
ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াত স্পষ্টত প্রমাণ করে যে যুবতী নারীকে বের হওয়ার সময় নিজ মুখমণ্ডল পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা এবং পর্দা ও সংযম প্রকাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। যেন অসাধু ব্যক্তিরা তাদের ব্যাপারে কোন লালসা করতে না পারে।’ (আহকামুল কোরআন : ৩/৪৮৬)