পাঁচ ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে যুগপৎ আন্দোলন
প্রকাশকালঃ
১৫ জুলাই ২০২৪ ১২:১৮ অপরাহ্ণ ৬১২ বার পঠিত
পাঁচ ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। আন্দোলনের প্রথম ধাপে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা-চুক্তির প্রতিবাদে সমাবেশ, মিছিল, রোড মার্চ, পদযাত্রা, সেমিনারসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি থাকতে পারে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের তিন মাসের একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে বিএনপি ও শরিকরা। আগামী সপ্তাহে ওই কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে আজ সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গত শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারতের সঙ্গে রেল করিডরসহ ‘অসম’ চুক্তি, পানির ন্যায্য হিস্যা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দেশব্যাপী দুর্নীতির প্রতিবাদ—এই পাঁচ ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সম্প্রতি পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর চীন ও ভারত সফর নিয়ে নানা কথা আলোচিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখনই আন্দোলন জোরদার করার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছে বিএনপি।
কর্মসূচির বিষয়ে মতামত নিতে গত ১১ জুলাই থেকে বিএনপি শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আবার কথা বলবেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। যুগপৎ কর্মসূচি চূড়ান্তে গঠিত বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সমন্বিত একটি কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। এবারের কর্মসূচির মাধ্যমে যুগপতের আন্দোলন আবার শুরু হবে। তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে যা আছে
যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটি ঠিক থাকলে আগামী শুক্র অথবা শনিবার ঢাকায় সমাবেশ হবে। সেখান থেকে বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করবে। অন্য দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি দেবে। কোনো কারণে সমাবেশ করাটা যৌক্তিক মনে না হলে সংবাদ সম্মেলন করেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। প্রস্তাবে আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত ‘রেল করিডর’ ইস্যুতে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ ছাড়াও সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল, পদযাত্রা, লিফলেটসহ নানা কর্মসূচি আছে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ২৯ জুলাই ঢাকায় সমাবেশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ওই সমাবেশ থেকে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরিকল্পনায় ১০ বিভাগে সমাবেশ শেষে ঢাকা মহাসমাবেশ করার কথা বলা হয়েছে। এই কর্মসূচির ফাঁকে দুর্নীতিবিরোধী সভা-সমাবেশ করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা তিন মাসের কর্মসূচি তৈরি করে তা দলের মহাসচিবের কাছে জমা দিয়েছেন। আজকের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাব উপত্থাপন করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
চুক্তি নিয়ে যা বলছে বিএনপি
বৈঠকে নেতারা বলেন, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে হওয়া ১০ সমঝোতা চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। প্রতিটি চুক্তিকে অসম মনে করছে বিএনপি। দলটির সবচেয়ে বড় আপত্তি রেল ট্রানজিট সমঝোতা চুক্তি নিয়ে। দলের নেতারা এটিকে রেল করিডর বলছেন। নেতারা মনে করেন, কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশের রেল যোগাযোগের নামে করিডর দেওয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে কোনো কথা না হওয়ায় দলটির নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, রাষ্ট্র হিসেবে বিএনপি সরাসরি ভারতের বিরোধিতা করবে না। তবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে—এমন কোনো চুক্তি কিংবা দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হলে তার বিরোধিতা করবে দলটি।