ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
গত ৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জমায়েতে হামলায় আহত শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিকের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১০৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। মামলায় হত্যা, শিক্ষার্থীদের আহত এবং লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলাটি করেন। রুহুল আমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের সেনের খামার গ্রামের বাসিন্দা এবং কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দায়েরকৃত মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে শহরের ভোকেশনাল মোড়ের বাসিন্দা এজাহারনামীয় আসামি আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন– আওয়ামী লীগ নেতা সাইদ হাসান লোবান, রাশেদুজ্জামান বাবু, জিল্লুর রহমান টিটু, কুড়িগ্রাম পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিউল ইসলাম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রেদওয়ানুল হক দুলাল, আনিছুর রহমান চাঁদ, মোমিনুর রহমান মুমিন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নয়ন, সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম রতন, জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম (আইয়ুব), কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লিটন মিয়াসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১০৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩২৬ ধারাসহ কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে হামলা, হত্যা, জখম, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহারে উল্লিখিত একেক জন আসামির বিরুদ্ধে একেক ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট জেলা শহরের ঘোষপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জমায়েতের ওপর ধারালো ও ভোতা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসামিরা হামলা করেন। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট ও জখম করে। তাদের কয়েকজনের হামলায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া আশিকুর রহমান আশিক মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন। পরে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ছাড়াও আসামিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী ও কয়েকজন সাক্ষীর ওপর হামলা করে আহত করা, প্রাণনাশের হুমকি এবং আরেক সাক্ষীর মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
নিহত আশিক উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের কৃষক চাঁদ মিয়ার ছেলে। উলিপুরের পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী মৃত্যুর সাত মাস আগে বিয়ে করেছিলেন।
ওসি নাজমুল আলম বলেন, ‘মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে।’
প্রসঙ্গত, ৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার জমায়েত চেষ্টাকালে শহরে প্রবেশের বিভিন্ন পথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। শহরের শাপলা চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জড়ো হন। অন্যদিকে শহরের দাদামোড়ে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে অংশ নেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হন। পরে আওয়ামী লীগ পিছু হটতে বাধ্য হয়।