দায়সারা অভিযোগপত্র, তদন্ত দীর্ঘ—এক মামলায় আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৪২ অপরাহ্ণ   |   ৩৯ বার পঠিত
দায়সারা অভিযোগপত্র, তদন্ত দীর্ঘ—এক মামলায় আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন

অনলাইন ডেস্ক-ঢাকা প্রেস

 

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একই দিনে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে নৃশংস দুইটি হত্যাকাণ্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নিহত হন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও শিক্ষার্থী শামীম মোল্লা। এ দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও এক বছর পরও বিচার প্রক্রিয়ায় আসেনি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি।
 

তদন্তে বিলম্ব, বিচার অনিশ্চিত

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। জামিনে থাকা আসামিরা নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে, শামীম হত্যার মামলায় দায়সারা চার্জশিট জমা দেওয়ায় বাদীর নারাজি আবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
 

দুটি মামলাই তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নিহতদের স্বজনরা প্রশ্ন তুলেছেন— “এক বছরেও যদি তদন্ত শেষ না হয়, তবে বিচার কবে? আমরা দ্রুত বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড

ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মারধরের মধ্যে তিনি ক্ষুধার কথা জানালে তাঁকে খাবার খাইয়ে পুনরায় নির্যাতন করা হয়। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় মামলা করেন এবং আট ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
 

চার্জশিটে অব্যাহতি, বাদীর আপত্তি

তদন্ত শেষে গত ডিসেম্বর মাসে ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। তবে বাদী মোহাম্মদ আমানুল্লাহ অভিযোগ করেন, আটজনের নাম গ্রেপ্তারদের জবানবন্দিতে এলেও চার্জশিটে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন—

“সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও কিংবা মর্গে লাশ নেওয়া কনস্টেবলকেও সাক্ষী ধরা হয়নি। সঠিক তদন্ত করলে আরও অনেকের নাম আসত।”

আদালত পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

বর্তমানে তিন কারাবন্দীসহ মোট ২১ আসামির মধ্যে ১৫ জন পলাতক। নিহত তোফাজ্জলের একমাত্র স্বজন তার মামাতো বোন আসমা আক্তার বলেন—

“হত্যার সঙ্গে জড়িত একটিও যেন বাদ না যায়। বিচার দেরি হলে ন্যায়বিচারও বিলম্বিত হয়।”


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শামীম হত্যাকাণ্ড

একই দিন জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করা হলেও ছয় মাস পর পাঁচজন ফের ক্যাম্পাসে ফিরেছেন।

তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (জাকসু)-এর নির্বাচনে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দুজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল শাখার নেতা হিসেবে সক্রিয়। এছাড়া যিনি গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে ফিরেছেন, তিনিও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।


তদন্ত চলমান, পরিবার হতাশ

পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই খুদা জানান, তদন্ত এখনো চলছে এবং প্রত্যেকের ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে। তবে নিহত শামীমের ভাই শাহীন মোল্লা হতাশা প্রকাশ করে বলেন—

“আমার ভাই নির্দোষ ছিল। আসামিরা বাইরে ঘুরলেও পুলিশ ধরছে না। কখন বিচার পাব, তা শুধু আল্লাহই জানেন।”

 

দুটি হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হলেও তদন্তে গড়িমসি ও অসম্পূর্ণ চার্জশিটের অভিযোগ উঠেছে। একদিকে আসামিরা ক্যাম্পাসে সক্রিয়, অন্যদিকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন— “দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে।”