রমজানের বাজারে বড় অস্বস্তি: ভোজ্যতেল

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৩৫ অপরাহ্ণ   |   ১০৪ বার পঠিত
রমজানের বাজারে বড় অস্বস্তি: ভোজ্যতেল

মো: আমিনুল ইসলাম

 

‘বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। তবে রোজা শুরু হলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়, সেটা দেখা যাবে।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কেনার পর নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ হাসান। ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন রহিমা সুলতানা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মহল্লায় তেল না পেয়ে কারওয়ান বাজারে গেলাম। আট-দশটা দোকানে খুঁজেও তেল পেলাম না। তেল গেল কোথায়?’

 

 

রোজার আগে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রতিবছর রোজার পূর্বমুহূর্তে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন। যদিও এবারের বাজারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও, ক্রেতাদের মধ্যে পুরোনো ভয়ের ছাপ রয়ে গেছে। রোজা শুরুর পর কিছু পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি ও দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এবছর সবজি ফলনের দিকে বিশেষভাবে ভালো হওয়ায় দাম কমেছে। তবে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট রমজান বাজারের মধ্যে অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 

তবে বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়ছে না, এমন নয়। এই সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি, ছোলা, বেগুন, লেবু, শসা এবং বিদেশি ফলের দাম কিছুটা বেড়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই ইফতারির পণ্য।
 

ভোজ্যতেলের সংকট

দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে অরাজকতা। শুল্ককর ছাড় দেওয়া হলেও আমদানিকারকরা ভোক্তাদের সঙ্গে ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’ থেকে বের হতে পারেননি। বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়ানোর দাবী তুলছে তারা, তবে সরকার তা গ্রহণ করছে না। এমনকি আমদানির বিলম্বের কারণে সরবরাহ কমানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
 

গেল সপ্তাহে ভোক্তা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমদানিকারকদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, গতকাল থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। তবে বাজারে গিয়ে ক্রেতারা টের পেয়েছেন, সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ঢাকার মহাখালী, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া এবং কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের সংকট আরও বেড়ে গেছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল মেলে দুই-এক দোকানে। তবে খোলা সয়াবিনের সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, তার দাম বেড়ে গেছে। সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮২ টাকায়।
 

চট্টগ্রামে তেলের সংকট

চট্টগ্রামেও ভোজ্যতেলের সংকট চলছে। সেখানে খুচরা বাজারে তেল হন্যে হয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাচ্ছে না। রমজান ঘনিয়ে এলেও সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না। এক লিটার বা দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন প্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও কয়েকটি জায়গায় পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দাম বেশি।
 

লেবুর দাম বেড়েছে

ইফতারে লেবুর শরবত জনপ্রিয়। তাই লেবুর দাম গত এক সপ্তাহ ধরে চড়া। মাঝারি আকারের এক হালি লেবু কিনতে খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২০ থেকে ৫০ টাকা। লেবুর মৌসুম না থাকায় চাহিদা বেশি থাকলেও বাজারে যথেষ্ট লেবু আসছে না, ফলে দাম বেড়েছে।
 

খেজুরের দাম কমেছে

রোজার শুরুতে খেজুরের দাম সাধারণত বৃদ্ধি পায়, তবে এবছর দাম কমে গেছে। মানভেদে খেজুর কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। বিশেষ করে জায়েদি খেজুরের দাম কমেছে। গত বছর ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া জায়েদি খেজুর এবারে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
 

বেগুনের দাম নিয়ে শঙ্কা

বেগুন রোজার আগে প্রায়ই দাম বেড়ে যায়, তবে বর্তমানে তার দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
 

ছোলার দাম কমেছে

ছোলার দাম গত মাসে বেড়ে ১৩০ টাকা ছাড়িয়ে গেলেও, বর্তমানে তার দাম ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমেছে। তবে, এটি গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছর ছোলার কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা।
 

গরুর মাংসের দাম

গরুর মাংসের দাম গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 

স্বস্তি কোথায়?

আলু, পেঁয়াজ, চিনি, সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। আলু এবং পেঁয়াজের দাম কমেছে এবং সবজির দামও কম রয়েছে। তাছাড়া চিনির দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা ছিল।