আল্লাহর নূর অর্জনের উপায়

প্রকাশকালঃ ২৫ মে ২০২৪ ১২:১৮ অপরাহ্ণ ৪৩২ বার পঠিত
আল্লাহর নূর অর্জনের উপায়

নুর/আলো/জ্যোতি আল্লাহর এমন এক নিয়ামত, যার মাধ্যমে নবী-রাসুল ও আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দারা আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে ভ্রষ্টতার পথ থেকে আলোর পথে পরিচালিত করেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা অবিশ্বাসী, খোদাদ্রোহী অপশক্তি তাদের অভিভাবক। তারা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ওরা হলো জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫৭)


সৎ আমলের মাধ্যমে নুর অর্জন করতে পারলে এই নুরের আলোতে কিয়ামতের দিন সফলতা অর্জন করা যাবে। এই নুরের মাধ্যমে মানুষ আলোকিত হবে হাশরে, পুলসিরাতে ও জান্নাতে। তারা সব দিক থেকে নুরবেষ্টিত থাকবে। যেসব আমল মুমিনের জীবন আলোকিত করে, নিম্নে সেসব আমল নিয়ে আলোচনা করা হলো—

 

ভালোভাবে অজু করা

অজু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সালাত কবুলের জন্য এটি পূর্বশর্ত। যেসব আমলের মাধ্যমে আলো অর্জন করা যায়, তার মধ্যে অজু অন্যতম। নুআঈম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে অজু করতে দেখেন। অজু করতে তিনি মুখমণ্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেলেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেলেন। এভাবে অজু করার পর বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মত অজুর প্রভাবে কিয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা সক্ষম, তারা যেন বেশি বিস্তৃত দীপ্তিসহ উঠতে চেষ্টা করে। (মুসলিম, হাদিস : ২৪৬)


নিয়মিত সালাত আদায় করা

সালাত শুধু ফরজ ইবাদত নয়, বরং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। সালাত এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে নুর বা আলো অর্জন করা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক। ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ মানুষের আমলের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ’ সওয়াবের পাল্লা পরিপূর্ণ করে দেয়। অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। সালাত হলো নুর বা আলো। দান-খয়রাত (দানকারীর পক্ষে) দলিল। ধৈর্য হলো জ্যোতি। কোরআন হলো তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলিল। প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে। হয়তো তাকে সে আজাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)

 

জুমায় উপস্থিত হওয়া

জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। জুমায় উপস্থিত হওয়ার যেমন বিশেষ ফজিলত আছে, তেমনি এতে উপস্থিত হয়ে সালাত আদায় করা আল্লাহর নুর অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন পৃথিবীর দিবসগুলোকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুমার দিনকে আলোকোজ্জ্বল ও দ্বীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুমা আদায়কারীরা আলো দ্বারাবেষ্টিত থাকবে, যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে। এটি তাকে প্রিয় ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তারা আলোবেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মতো উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কর্পূরের পর্বত থেকে সঞ্চিত মিশকের মতো। তাদের দিকে জিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফেরাতে না ফেরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সঙ্গে একনিষ্ঠ সওয়াবপ্রত্যাশী মুয়াজ্জিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ১০২৭; সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস : ১৭৩০)

 

অন্ধকারে মসজিদে হেঁটে যাওয়া

অজু করে মসজিদে হেঁটে যাওয়ার অনেক ফজিলত আছে। আর যদি কেউ অন্ধকার রাতে তথা এশা ও ফজরের সালাত জামাতে আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে তাহলে এটি তার জন্য নুর হবে। যে নুরের আলোতে সে পুলসিরাত অতিক্রম করবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রাতের অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকদের কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ জানিয়ে দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩)

 

কোরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা

যেসব মাধ্যমে নুর বা জ্যোতি অর্জন করা যায়, তন্মধ্যে কোরআন তিলাওয়াত একটি বিশেষ মাধ্যম। কোরআনের মধ্যে বিশেষ কিছু সুরা আছে, যেগুলো নুর অর্জনে বেশি সহায়ক। শুধু কোরআন তিলাওয়াতকারী এই মর্যাদা লাভ করবে না, বরং তিলাওয়াতকারীর মাতা-পিতা ওই মর্যাদা পাবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এভাবেই আমরা তোমার কাছে প্রেরণ করেছি রুহ—আমাদের আদেশক্রমে। অথচ তুমি জানতে না কিতাব কী বা ঈমান কী? বস্তুত আমি (আল্লাহ) একে করেছি জ্যোতি। যার মাধ্যমে আমরা পথ প্রদর্শন করি আমার বান্দাদের মধ্যে থেকে আমি যাকে ইচ্ছা করি। আর নিশ্চয়ই তুমি পথ প্রদর্শন করে থাকো সরল পথের দিকে।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৫২)

 

ইসলামের ছায়াতলে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া

যেসব উপায়ে আল্লাহর নুর বা জ্যোতি অর্জন করা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো ইসলামী বিধান পালনের মাধ্যমে বার্ধক্যে উপনীত হওয়া। কারণ কেউ যদি বার্ধক্যে পৌঁছে আর তার চুল পেকে যায়, তাহলে তার এই চুল কিয়ামতের দিন নুর বা জ্যোতি হিসেবে উপকারে আসবে। তবে অবশ্যই ইসলামী বিধানের ছায়াতলে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির মুসলিম অবস্থায় কিছু পরিমাণ চুলও সাদা হবে কিয়ামতের দিন তার জন্য বিশেষ ধরনের নুর হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৫)

 

পরিবারে ইনসাফ কায়েম করা

প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাঁরা ইনসাফ কায়েম করতে পারবেন তাঁদের এই ইনসাফপূর্ণ আচরণ কিয়ামতের দিন নুর বা জ্যোতি হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে যারা ন্যায়পরায়ণ, তারা দয়াময়ের ডান পার্শ্বে জ্যোতির মিম্বারের ওপর অবস্থান করবে। আর তার উভয় হাতই ডান। (ওই ন্যায়পরায়ণ তারা) যারা তাদের বিচারে, পরিবারে ও নেতৃত্বাধীন ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৭)

 

খাঁটি মনে তাওবা করা

প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো ভুল করে থাকে। তবে শ্রেষ্ঠ ওই ব্যক্তি, যে ভুল করে আল্লাহর কাছে তাওবা করে। তাওবাকারীরা গুনাহমুক্ত ব্যক্তিদের মতো। আল্লাহ তাআলা তাওবা করাকে নুর বা জ্যোতি অর্জনের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, বিশুদ্ধ তাওবা। নিশ্চয়ই তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। যেদিন আল্লাহ স্বীয় নবী ও তাঁর ঈমানদার সঙ্গীদের লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডানে ছোটাছুটি করবে। তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা : তাহরিম, হাদিস : ৮)

মহান আল্লাহ আমাদের আলোকিত জীবন দান করুন।