ক্রীড়া প্রতিবেদক:-
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আয়োজিত নারী এশিয়ান কাপ ফুটবল ২০২৬-এর ট্রফি উন্মোচন ও ড্র অনুষ্ঠানে যখন ১১ দেশের খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তারা উৎসবমুখর পরিবেশে অংশ নিচ্ছেন, তখন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাংলাদেশের ছিল না কোনো প্রতিনিধি। বিশ্ববিখ্যাত সিডনি অপেরা হাউসের বিপরীত পাশে দাঁড়িয়ে অনেকে সেলফি তুলে রাখছেন স্মৃতির ঝুলিতে। অথচ প্রথমবার নারী এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেও বাংলাদেশের কেউ সেই গৌরবময় মঞ্চে ছিলেন না।
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ পিটার বাটলার এবং অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারকে আমন্ত্রণ জানালেও, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাদের কাউকেই পাঠায়নি। বাফুফের ব্যাখ্যা, অনূর্ধ্ব-২০ নারী দলের লাওস সফরের ব্যস্ততার কারণে প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় দলের এমন মর্যাদাপূর্ণ আয়োজনে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত বাফুফের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ড্র অনুষ্ঠানটি আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় সিডনিতে অনুষ্ঠিত হবে। আসরটি মাঠে গড়াবে আগামী ১ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ার তিনটি শহরে।
অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপ ফুটবলের শিরোপা উন্মোচন ও ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাড়া আসরে অংশ নিতে যাওয়া প্রতিটি দেশের এক বা একাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ছবি: এএফপি
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের সানজিতা বাসফোর ট্রফির পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি তাঁর জন্য অনেক বড় সম্মানের বিষয়। সেই সম্মান পাওয়ার সুযোগ থেকেও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলেন, ‘কেউ যায়নি।’ তবে কেন কেউ যাননি— এ বিষয়ে তার কাছ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম জানান, ‘এএফসি আমাদের কোচ ও অধিনায়ককে আমন্ত্রণ জানালেও, ১ আগস্ট লাওসে অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে খেলার প্রস্তুতি থাকায় কাউকে পাঠানো হয়নি। অস্ট্রেলিয়া যাওয়া-আসা ও সময়ের হিসাব কষে আমরা সিদ্ধান্ত নিই— কেউ যাবেন না। কোচকেও অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি ক্যাম্পেই সময় দিতে চেয়েছেন।’
তবে প্রশ্ন উঠেছে, অনূর্ধ্ব-২০ দলের খেলার কারণে জাতীয় দলের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি না পাঠানো কতটা যুক্তিযুক্ত? জাতীয় দলের অধিনায়ক যদি অনূর্ধ্ব-২০ দলেরও অধিনায়ক হন, তবে সেটিও একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। প্রয়োজনে সিনিয়র দলের অন্য কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো যেত।
ড্রয়ের জন্য দলগুলোকে চারটি পটে ভাগ করা হয়েছে:
পট-১: অস্ট্রেলিয়া (স্বাগতিক), জাপান, উত্তর কোরিয়া
পট-২: চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম
পট-৩: ফিলিপাইন, চায়নিজ তাইপে, উজবেকিস্তান
পট-৪: বাংলাদেশ, ভারত, ইরান
এই বিভাজনের কারণে বাংলাদেশ ভারতের বা ইরানের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়বে না।
বাংলাদেশের মেয়েদের এশিয়ান কাপে অংশগ্রহণ দেশের ফুটবলের জন্য একটি বড় অর্জন হলেও, এই অর্জনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে বাফুফে— এমনটাই মনে করছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।