ধারণক্ষমতার ৩ গুণ বন্দির কারাবাস কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে

প্রকাশকালঃ ২৫ মে ২০২৪ ০৬:০২ অপরাহ্ণ ৬২২ বার পঠিত
ধারণক্ষমতার ৩ গুণ বন্দির কারাবাস কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

ঢাকা প্রেসঃ
কুড়িগ্রাম কারাগারের ছয়টি ওয়ার্ডে বন্দিদের ধারণক্ষমতা নারী ও পুরুষ মিলে ১৬৩ জন। কিন্তু ওই বন্দির বিপরীতে থাকছেন তিন গুণ বন্দি। ফলে তাদের আবাসন, শৌচাগারসংকট চরমে উঠেছে। এর ফলে কারা সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন বন্দিরা। এ সংকট চলছে তিন দশক ধরে। এদিকে কারাগারে দায়িত্বপালনকারী জেলারসহ প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনমাফিক আবাসন নেই। কারাগারের মূল ফটকে প্রহরায় থাকা সদস্যদের রোদে পুড়তে ও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।

হাজতি ও কয়েদিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজন বা দর্শনার্থীদেরও নেই তেমন বসার জায়গা। নেই শৌচাগার ব্যবস্থা। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত কারাগারে ১৮ নারী বন্দিসহ মোট বন্দি আছেন ৪৪২ জন। এরমধ্যে বিনাশ্রম কয়েদি দুই নারীসহ আছেন ৮১ জন। এ ছাড়া আছেন সশ্রম কারাদণ্ডভুক্ত তিন নারীসহ ৫৬ আসামি। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অপরাধে আরপি ইন্ডিয়ান মামলার এক আসামি আছেন। দুই বছর আগে সাজা শেষ হলেও প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় তিনি মুক্ত হচ্ছেন না। এ ছাড়া দুটি দুধের শিশু আছে তাদের মায়ের সঙ্গে। হিসাব বলছে, প্রায় সময় ৫০০ বন্দি থাকেন কারাগারটিতে। বর্তমানে বন্দির সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য থেকে জানা গেছে, তিন দশকের বেশি সময় ধরে এ কারাগারে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি রাখতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এ সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য বলছে, কারাগারের দশ তলা একটি ভবন হওয়ার কথা আছে। প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে যাওয়ার পরও নতুন ভবন হওয়ার বিষয়টি থমকে আছে। জামিনে মুক্ত হয়ে ও সাজা ভোগ করে বের হওয়া একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বলে কারাগারের ভেতরের অবস্থা জানা গেছে। ভেতরে এক আসামির থাকার জায়গায় কখনো তিনজন কখনো চারজন থাকেন। ঢালা বিছানায় শুতে হয়। টয়লেট সংখ্যা কম। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন একজন বলেন, ভেতরে বড় সমস্যা টয়লেটের। সাড়ে পাঁচ শতাধিক বন্দির জন্য শৌচাগার ২০টি।

একজন জানান, দিনে ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করার সুযোগ নেই। সন্ধ্যায় সব বন্দি ওয়ার্ডে ফিরলে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কারাগারে দায়িত্বরতরাও নানা সমস্যায় রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে জেলারসহ ৭০-৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন। নারী থাকেন ৬-৭ জন। সম্প্রতি নারী কারারক্ষীদের জন্য একটি পাঁচতলা ভবন হয়েছে। ভবনে ১০টি পরিবার থাকার সুযোগ আছে। নারী কারারক্ষীরা থাকলেও অন্যদের কাছে বাসাবাড়িতে ভাড়া থাকতে হচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা কারাগার হলেও কারাগারের অবকাঠামো আছে আগের মতো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন ভবন হওয়ার কথা রয়েছে।’ জেল সুপার মো. সফিকুল আলম জানান, চলতি মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি দল সরেজমিন তদন্ত করতে আসবে। তাতে প্রকৌশলীরা থাকবেন।

কারাগারের নতুন ভবনের যে ডিজাইন পাঠানো সেটি ঠিক আছে কি না দেখতে আসবেন। তারপর হয়ত নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আইনজীবী এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘কারাগারটি মহকুমা আমলের জনসংখ্যা অনুযায়ী করা। জনসংখ্যা বাড়লেও কারাগারের অবকাঠামো হয়নি। ফলে বন্দিদের সকল অধিকার নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না। বন্দিদের মানবিক অধিকারগুলো রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যারা কারারক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের সংকটেও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া দরকার।’ কারাগার সূত্র জানিয়েছে, কারাগারের নিজস্ব জমি প্রায় ১৬ একর। মূল কারাগার স্থাপন হয়েছে প্রায় ৪ একরের মধ্যে। কারাগারের নতুন ভবন নির্মাণের ভূমি জটিলতা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন কারাগার ভবন নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক দফা পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে। নতুন ভবন হলে সমস্যাগুলো থাকবে না।’