গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে যে ১০ শতাংশ চুরি হয়, তা বন্ধ করতে পারলে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের চুরি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, কারণ তাদের ভোটের চিন্তা করতে হয় না। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বক্তারা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করেন। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, "সরকারের নেওয়া এসব নীতি বাস্তবায়িত হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? গ্যাস ও ভ্যাট বৃদ্ধির আগে এর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনও মনে করা হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে পণ্য আমদানি, রপ্তানি এবং মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমে গেছে, যা বিনিয়োগের নিম্নমুখী প্রবণতাকে নির্দেশ করে। এমন অবস্থায় গ্যাস ও ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
এ কে আজাদ সরকারের পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করে বলেন, "গ্যাসের দাম বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। বরং অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের ৪০ শতাংশ বেশি খরচ করতে হচ্ছে।"
সেমিনারে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, "ভ্যাট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।" তিনি আরও জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি শিল্প কারখানাগুলো বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা রয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, "নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান বাধা। ঘনঘন এসআরও জারি করে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা হয়, যা ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। দুর্নীতির কারণে সব খাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।"
'বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান এবং লাফার্জ হোলসিমের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী।