আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। কেউ যদি আল্লাহর হুকুম না মানে তাহলে জীবন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি সে তাওবা না করে, পাপমোচন না করাতে পারে, পরকালে পাপের শাস্তি তো আছেই। কিন্তু দুনিয়াতেও পাপের অনেক প্রভাব আছে।
ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়া
পাপের অন্যতম এক শাস্তি হচ্ছে পাপের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে আল্লাহর ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে দেন। সে বাহ্যিক ইবাদত-বন্দেগি করলেও তাতে কোনো ধরনের স্বাদ অনুভব করে না। পাপের কারণে তার অন্তর এক ধরনের অন্ধকারে ছেয়ে যায়। তখন তার আল্লাহর স্মরণ, কোরআন তিলাওয়াত, মসজিদে গমন—এগুলো অনেক কঠিন মনে হয়।
রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়
প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে দুনিয়াতেই সেই আল্লাহ তার রিজিককে সংকুচিত করে দেন। পাপের কারণে আল্লাহ তাআলা জীবনের ও রিজিকের বরকত ছিনিয়ে নেন। সাওবান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)
পরস্পর মতবিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়
পাপের কারণে পরস্পর মতবিরোধ ও লড়াই হয়ে থাকে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুই ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর জন্য অথবা ইসলামের সৌজন্যে পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাদের মধ্যকার কোনো একজনের প্রথম অপরাধ তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায়।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪০২)
লাঞ্ছিত হয়
পাপিষ্ঠ ব্যক্তি মানুষের কাছে অপদস্ত ও লাঞ্ছিত হয়। কারণ আল্লাহ তাকে নিজেই অপমান করে থাকেন। আর যাকে আল্লাহ তাআলা লাঞ্ছিত করবেন তাকে সম্মানিত করার আর কে আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তার কোনো সম্মানদাতা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি চান।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৮)
নিরাপত্তা চলে যায়
পাপাচারের কারণে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি যে নিরাপত্তা থাকে সেই নিরাপত্তা চলে যায় এটা আল্লাহ তাআলার বিধান সর্বকালে সর্বাবস্থায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যা ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ। চতুর্দিক থেকে তার জীবিকা চলে আসত পর্যাপ্ত পরিমাণে। অতঃপর তা আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের ক্ষুধা ও ভীতির পোশাক আস্বাদন করালেন।’ (সুরা : আন-নাহল, আয়াত : ১১২)
সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়
পাপের কারণে কিংবা পাপাসক্ত ব্যক্তি আল্লাহকে ভুলে যায় এবং সে তার ভালো-মন্দ পার্থক্য করতে পারে না। আল্লাহ তার জন্য সেটা ভুলিয়ে দেন। তার অন্তর্দৃষ্টি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। ফলে ভালো-মন্দ, সুন্নত-বিদআতের মধ্যে পার্থক্য করার অনুভূতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের মতো হইয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, ফলে আল্লাহ তাকে আত্মভোলা করে দেন। বস্তুত তারাই অবাধ্য।’ (সুরা : আল-হাশর, আয়াত : ১৯)