ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ খাওয়ার পানির অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় নোভা কাখোভকা বাঁধ ধসে পড়ায় এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি ঐ বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় রাশিয়া ইউক্রেনকে এবং ইউক্রেন রাশিয়াকে দোষারোপ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনার পেছনে কারা দায়ী তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে নিপ্রো নদীর একটি বাঁধ ধসে পড়ার পর নদীতীরবর্তী রাশিয়া ও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে আছেন। এই বাঁধ ধসের ঘটনার ‘মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারি পরিণতি’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান। মঙ্গলবার বিশাল এই বাঁধটি ধসে পড়ে; এতে ইউক্রেনের যুদ্ধকবলিত এলাকাগুলো জুড়ে বিপুল পরিমাণ পানি ছড়িয়ে পড়ে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করে, ফলে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ঐ এলাকায় এখনো হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে টেলিগ্রামে এক পোস্টে তিনি বলেন, আমাদের যারা লোকজনকে সহায়তা দিয়ে থাকেন, তারা ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ করছে। তারা লোকজনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা শুধু ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ আছে—এমন সব অঞ্চলের লোকজনকে সেবা দিতে পারছি।
তিনি বলেন, রাশিয়া যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণে আছে, সেখানে দখলদাররা সাধারণ মানুষকেও কোনো সহায়তা দিচ্ছে না। বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করে জেলেনস্কি বলেন, এই হামলা অবশ্যই ইচ্ছাকৃত ঘটনা। তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার সন্ত্রাসীরা আরো একবার প্রমাণ করল যে, তারা সবকিছুর জন্য একটি হুমকি। ঐ বাঁধ ধসে পড়ার কারণে দিনিপ্রো নদীর পানি বেড়ে গেছে এবং খেরসন শহরে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া অবশ্য এই বাঁধ ধসে পড়ার কোনো দায় নিচ্ছে না। বরং তারা বলছে, ইউক্রেনের গোলার আঘাতে এই বাঁধ ধসে পড়েছে। তবে ইউক্রেন বা রাশিয়া কারো দাবিই যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কাখোভকা বাঁধটি এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বাঁধ স্থানীয় কৃষক এবং বাসিন্দাদের পাশাপাশি জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রে পানি সরবরাহ করে। এটি রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার দক্ষিণেও পানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। ডেপুটি প্রসিকিউটর জেনারেল ভিক্টোরিয়া লিটভিনোভা ইউক্রেনীয় টেলিভিশনের এক ভাষণে বলেন, প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া দরকার। বাঁধটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরই আশপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। স্থানীয় এক সামরিক কর্মকর্তা বলছেন, খেরসন অঞ্চলের অন্তত আটটি বসতি ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বাঁধ ধসের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করে ক্রেমলিন বলেছে, নিজেদের শুরু করা বড় ধরনের পালটা আক্রমণ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টায় তারা এটা করেছে। ইউক্রেনের ঐ হামলা রাশিয়া ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করেছে। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, এই বাঁধের ভাঙন ঘরবাড়ি, খাদ্য, নিরাপদ পানি ও জীবিকার ক্ষতির মাধ্যমে দক্ষিণ ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের উভয় পাশের হাজার হাজার মানুষের জন্য মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারি পরিণতি বয়ে আনবে। এই বিপর্যয়ের পুরো মাত্রা কেবল আসছে দিনগুলোতে পূর্ণভাবে বোঝা যাবে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, এই বন্যায় সম্ভবত অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের হিসাবে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে আছেন, যা বুধবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। এই বাঁধ থেকে উজানের দিকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে খেরসন শহরে মঙ্গলবার পানির স্তর ৩ দশমিক ৫ মিটার বেড়েছে, এতে প্লাস্টিকের ব্যাগে জিনিসপত্র নিয়ে বাসিন্দারা হাঁটু পানি ভেঙে ঘরবাড়ি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
শহরটির বাসিন্দা ওকসানা (৫৩) বলেন, সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে। সব ফার্নিচার, ফ্রিজ, খাবার, ফুল পানিতে ভাসছে। কী করব বুঝতে পারছি না। প্রায় ৮০টি এলাকা বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বাস, ট্রেন ও প্রাইভেট গাড়ি প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে।