ঢাকা প্রেস নিউজ
দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সমর্থন করছে না বিএনপি। তাদের মতে, গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পর এ ধরনের ঘটনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি মূলত নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই বর্তায়। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, তাই এখন সরকারকেই এই বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিএনপি চলমান নৈরাজ্যকে সমর্থন করে না এবং কোনো ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত হবে না। বিএনপি নেতারা আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবেন। তবে এই পরিস্থিতির জন্য কাউকে সরাসরি দোষারোপ করা হবে না এবং বিএনপি এ বিষয়ে কোনো কর্মসূচিও দেবে না। বরং সভা-সেমিনারের মাধ্যমে বিএনপির অবস্থান জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
বৈঠকে নেতারা মনে করেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ, যার উদ্দেশ্য জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করা। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতির মাধ্যমে বিএনপিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা কোনো বিশৃঙ্খল বা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন। তৃণমূল পর্যায়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে, বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া বা ম্যুরাল ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। দলের বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে এই নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বৈঠকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরপর কিছু ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু ছয় মাস পর এসে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। নেতারা মনে করছেন, এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে দায়ী করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং নির্বাচনকে বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
নেতারা আরও বলেন, বর্তমানে ছাত্রদের ব্যবহার করে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি সংগঠিত হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা। অন্যদিকে, বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন হোক, যাতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে, যা নির্বাচনের ত্বরান্বিতকরণের পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু একটি বিশেষ মহল ষড়যন্ত্র করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে, যাতে নির্বাচনী রোডম্যাপ বিলম্বিত হয়।
বিএনপি এক বিবৃতিতে সরকারকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এতে বলা হয়, যদি সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নৈরাজ্য আরও বাড়বে এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রশাসনে এখনও ফ্যাসিস্ট দোসররা সক্রিয় রয়েছে, বিচার বিভাগেও তাদের প্রভাব রয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকার কি জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সফল হতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ আশা করেছিল, আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু গত ছয় মাসে সরকার জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে, যা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালে ডামি প্রার্থীর নির্বাচন হয়েছে। জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আগামী সোমবার বিএনপি এই বিষয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।